প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ এপ্রিল : স্ত্রীকে খুন করে মৃতদেহ লোপাটের পরিকল্পনা কষেছিল স্বামী । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । শ্বশুর বাড়ির গোয়াল ঘরের মাচা থেকে বস্তা বন্দি অবস্থায় উদ্ধার হল তিন মাস আগে বিয়ে হওয়া বধূর মৃতদেহ। মৃতার নাম ফুলকলি খাতুন (১৮)।ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কাইগ্রামে।তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী বাবু শেখ কে গ্রেপ্তার করেছে । ময়নাতদন্তের জন্য বধূর মৃতদেহ শুক্রবার পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। অভিযুক্ত জামাইয়ের ফাঁসির সাজার দাবি করেছেন বধূর মা ও আত্মীয় পরিজন ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,মন্তেশ্বরের কাইগ্রামের পাশাপাশি পাড়ায় বসবাস করেন বাবু শেখ ও তাঁর স্ত্রী ফুলকলির পরিবার । বাবু ও ফুলকলির মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয় । হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাবু শেখ বলতে শুরু করে তাঁর স্ত্রী অশান্তি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে । তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর রাতে ফুলকলির শ্বশুর বাড়ির গোয়ালঘরের আশপাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে । সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা বধূর বাবার বাড়ি ও মন্তেশ্বর থানায় খবর দেয় । খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। বাবু শেখের বাড়ির গোয়ালঘরের মাচা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হয় বধূর মূতদেহ । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, স্বামী বাবু শেখ এর পরিকল্পনা ছিল বধূকে খুন করার পর দেহ লোপাট করে দেওয়ার।সেই কারনেই বাবু তাঁর স্ত্রীর দেহ বস্তাবন্দি করে গোয়ালঘরের মাচায় তুলে রেখেছিল ।কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় বৃহস্পতিবার রাতে মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণে। জেরায় বধূকে খুনের কথা কবুল কার পরেই পুলিশ বাবু শেখ কে গ্রেপ্তার করে । খুনের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ শুক্রবার ধৃতকে কালনা আদালতে পেশ করে তদন্তের প্রয়োজনে নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে ।
বধূর মা কোহিনুর মল্লিক জানিয়েছেন ,ভাব ভালবাসা করে বিয়ে করলেও তাঁর মেয়ের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। জামাই ও তার পরিবার প্রায়শই টাকা পয়সার দাবি করতো ।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফুলকলির স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির তরফে বারবার বলা হচ্ছিল, ঘরের বউ ঝগড়ঝাঁটি করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। জামাই বাবু শেখও বাইকে চেপে তাঁর মেয়েকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে । তখন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি জামাই নৃশংস ভাবে খুন করে ফুলকলির দেহ বস্তায় পুরে গোয়ালের মাচায় তুলে রেখে দিয়েছে।কোহিনর মল্লিক বলেন ,দেহে পচন ধরে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণেই জানতে পারা গেল তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে । নয়তো দেহটাই হয়তো জামাই ও শাশুড়ি মিলে গায়েব করে দিত ।
বধূর মামা হীরা মল্লিক বলেন , ঠিক কবে তাঁর ভাগ্নিকে জামাই বাবু শেখ খুন করেছে সেটা এখনও তাঁদের কাছে পরিস্কার নয় ।তবে এটুকু বুঝতে পারছেন, সিনেমার চিত্র নাট্যকেও হারমানিয়ে দেওয়ার মতোন নিখুঁত পরিকল্পনা করে বাবু শেখ তাঁর স্ত্রী ফুলকলিকে খুন করেছে । মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলেই দেহটি বস্তাবন্দি করে গোয়াল ঘরের মাচায় তুলে রেখেছিল ।আর কেউ যাতে এই পরিকল্পনা টের না পায় তার জন্যেই বাবু শেখ লোক দেখানো ফুলকলির খোঁজ চালাচ্ছিল বলেই তারা মনে করছেন ।।