এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৮ সেপ্টেম্বর : আজ থেকে ৫ দিনের জন্য শুরু হচ্ছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন (Parliament Special Session) । জি ২০ সম্মেলনের আগে বিশেষ অধিবেশনের দিন ঘোষণার পর থেকেই ‘ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশন’ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ নিয়ে জল্পনা চলছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে । এদিকে বিল পাশ নিয়ে ধন্দ্বে আছে দেশের কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি । তারই মাঝে আজ সোমবার সংসদ কমপ্লেক্সে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন যে এই অধিবেশনটি সংক্ষিপ্ত তবে সময়ের দিক থেকে এটি একটি বড় অধিবেশন। এটি হবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অধিবেশন ।
জানা গেছে,আজ অধিবেশনের প্রথম দিন সকাল ১১ টায় লোকসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । ৭৫ বছরের সংসদীয় যাত্রা, অর্জন, অভিজ্ঞতা, স্মৃতি এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা হবে । ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সংসদ ভবনে বিশেষ অধিবেশন শুরু হবে। এর আগে গত শনিবার উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখর নতুন সংসদ ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন । বিশেষ অধিবেশনে পাঁচটি বৈঠক হবে। এই সময়ের মধ্যে চারটি বিল আনা হবে। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে প্রশ্নের উত্তর দিতে ৯টি বিষয়ের একটি তালিকা তৈরি করেছে। ভারতের বিরোধী জোটের ২৪ টি দল এই অধিবেশনে অংশ নেবে।
এদিকে বিশেষ অধিবেশন নিয়ে সংসদ ভবনে বৈঠকে বসবে ভারতের বিরোধী জোট। রাজ্যসভার বিরোধী মল্লিকার্জুন খড়গের চেম্বারে সকাল ১০ টায় বৈঠক হবে। অধিবেশন শুরুর আগে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। এই সময়কালে, অনেক দলই মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রবর্তন ও পাসের পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন জানায়। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেছেন যে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীদের অনুরোধে আমরা আমাদের এজেন্ডা পরিষ্কার করেছি। আমি সকল সাংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে অনুরোধ করছি। আজ, সংসদের ৭৫ বছরের যাত্রার বিষয়ে আলোচনা করা হবে কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০৪৭ সালের আগে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ঘিরে বিরোধী দলগুলির মধ্যেও সাজোসাজো রব দেখা দিয়েছে । আম আদমি পার্টি রাজ্যসভায় তার সমস্ত সাংসদের জন্য হুইপ ঘোষণা করেছে। আম আদমি পার্টির সকল সদস্যকে আজ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত হাউস মুলতবি না হওয়া পর্যন্ত হাউসে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ।
জানা যাচ্ছে যে আজ সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ৪ টি বিল পেশ করা হবে । প্রথমত,প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ, শর্তাবলী এবং অফিসের মেয়াদ) বিল ২০২৩ । এই বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে। বিল অনুযায়ী, কমিশনার নিয়োগ করবেন তিন সদস্যের একটি প্যানেল। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা এবং একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী থাকবেন।
দ্বিতীয়ত, অ্যাডভোকেটস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৩ বিল । এই বিলটিতে ৬৪ বছরের পুরনো অ্যাডভোকেটস অ্যাক্ট ১৯৬১ সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। বিলে লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যাক্ট, ১৮৭৯ বাতিল করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
তৃতীয়ত,পর্যায়ক্রমিক বিল ২০২৩- এর প্রেস এবং নিবন্ধন । এই বিলটি যেকোন সংবাদপত্র, সাময়িকী এবং বইয়ের নিবন্ধন এবং প্রকাশনার সাথে সম্পর্কিত। এদিন প্রেস অ্যান্ড বুক রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬৭1 বিল বাতিল করা হবে ।
এবং চতুর্থত, পোস্ট অফিস বিল,২০২৩ । এই বিলটি ১২৫ বছরের পুরনো ভারতীয় পোস্ট অফিস আইন বাতিল করবে। বিলটি পোস্ট অফিসের কাজকে সহজ করবে এবং পোস্ট অফিসের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দেবে।
এর বাইরেও সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল আনতে চলেছে বলে খবর । তার মধ্যে রয়েছে বহু চর্চিত
‘ওয়ান নেশন- ওয়ান ইলেকশন’ বিল । গত পয়লা সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ ৮ জন সদস্য রয়েছেন। লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে । তবে তিনি কমিটিতে থাকতে অস্বীকার করেছেন ।
অন্যদিকে সরকারকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আক্রমণ করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতিও নিয়েছে বিরোধীরা । ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা ৫ সেপ্টেম্বর মল্লিকার্জুন খার্গের বাড়িতে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে ভারত জোটে অন্তর্ভুক্ত ২৮ টি দলের মধ্যে ২৪ টি দল সংসদের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নেবে ।
ভারতের নাম নিয়ে বিতর্ক: বিরোধী জোট ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাদের জোটের নাম আই.এন.ডি.আই.এ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এখন দেশের নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’ করা নিয়ে জোর চর্চা চলছে। জি-২০ সম্মেলনের সময় নৈশভোজের জন্য দেওয়া আমন্ত্রণ কার্ডেও ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা ছিল। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দেশের নাম ফলকে লেখা ছিল ‘ভারত’ । এদিকে দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে তেলেবেগুনে জ্বলেছে বিরোধীরা । তাদের অভিযোগ, ভারত জোটের নাম নিয়ে ভয়ে দেশের নাম পাল্টাতে চলেছে সরকার।
চীনের নতুন মানচিত্র: এই অধিবেশনে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আবারও কেন্দ্রীয় সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। চীন গত ২৮ আগস্ট একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে তারা অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই চীনকে তাদের অংশ হিসাবে ঘোষণা করেছে। তবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, চীন সবসময়ই এই ধরনের কাজ করছে। রাহুল গান্ধী সম্প্রতি লাদাখ সফরের সময় বলেছিলেন যে চীন আমাদের এলাকা দখল করেছে। পুরো লাদাখ জানে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য দেওয়া উচিত বলেও তিনি দাবি করেন ।
আদানি-হিন্ডেনবার্গ: আদানি-হিন্ডেনবার্গ মামলাটি জেপিসি দ্বারা তদন্ত করা নিয়ে এই অধিবেশনে বিরোধীরা আবারো হট্টগোল করতে পারে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন যে আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত পুরো অধ্যায়ের সত্যতা কেবল যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) প্রকাশ করতে পারে। কংগ্রেস এই ইস্যুতে প্রতিনিয়ত সোচ্চার হচ্ছে। সংসদে আদানি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও দেখান রাহুল গান্ধী। এর পরে তিনি একটি মামলায় তার সদস্যপদ হারান, যদিও সুপ্রিম কোর্ট তার সদস্যপদ পুনরুদ্ধার করে।
মণিপুর হিংসা : গত ৩ মে থেকে মণিপুরে সংরক্ষণ নিয়ে কুকি এবং মেইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা চলছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৬০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। গত বর্ষা অধিবেশনেও একই ইস্যুতে সরকারকে ঘেরাও করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল বিরোধীরা। রাজ্য সরকার ২৯ আগস্ট বিধানসভার একদিনের অধিবেশনও আহ্বান করেছিল, কিন্তু বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে এটি স্থগিত করা হয়েছিল। এ নিয়ে কালো পতাকাও দেখিয়েছিল কংগ্রেস ।।