প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ সেপ্টেম্বর : দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেওয়ালে।হকের ’পেনশন’ টুকুও জুটছে না। পেনশন চালুর আর্জি নিয়ে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে শুকনো প্রতিশ্রুতি টুকু ছাড়া আর কিছুই মেলে নি।এমত পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন অসহায় এক মহিলা। আর তা নিয়েই এখন বর্ধমানে জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করা মহিলার নাম সুনীতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বর্ধমান শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহদরজা এলাকার বাসিন্দা। মহিলার বাবা শিবানন্দ ঘোষাল ১৯৯৬ সালের ৩১ অক্টোবর
জেলার কাটোয়া ব্লকের খাজুরডিহি গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারী পদ থেকে অবসর গ্রহন করেন। অবসর গ্রহনের ১৩ বছর বাদে অর্থাৎ ২০১০ সালের ৩১ জুলাই শিবানন্দ বাবু মারা যান।
তিনি মারা যাওয়ার পর সুনীতিদেবীর মা
পারিবারিক পেনশন পেতে থাকেন। তারই মধ্যে ২০১১ সালের ৯ মে সুনীতিদেবীর স্বামী অমল বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে মারা যান। ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুনীতিদেবীর মাও মারা যান।
সুনীতিদেবী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা মা ও স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৭ বছর ।
নিজের সংসার ও জীবন চালানোর মত আর্থিক সামর্থ্য তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এই প্রৌঢ় বয়সে কোথাও কোন কাজ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
মেয়ে জামাই তাঁকে যা দেয় তা দিয়েই কোনরকমে তাঁর দিন গুজরান হচ্ছে। তাই মা মারা যাবার পর বিধবা মেয়ে হিসাবে তিনি তাঁর বাবার পেনশনের অংশ পাবার জন্য ২০১৩ সাল থেকে লাগাতার প্রশাসনের কাছে আবেদন নিবেদন করে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে কাটোয়া ও কোলকাতায় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে
ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই ১০ বছরে কোনো সুরাহা হয় নি।সুনীতিদেবী বলেন ,অভাব অনটনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।তাই আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহ জেলা প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করার অনুমতি দেবার জন্য আবেদন করেছেন বলে সুনীতিদেবী
জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। সেখানে রাজ্যেরই এক অসহায় মহিলা তাঁর ন্যায্য পাওনার জন্য ১০ বছর ধরে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও সুরাহা পাচ্ছেন না। প্রশাসনিক কর্তারা তাঁকা শুধু ঘুরিয়ে মারছেন। অথচ পাড়ায় সমাধান,দুয়ারে সমাধান,এসব কত কি না গালভরা কর্মসূচির কথা সরকারী ভাবে প্রচার করা হচ্ছে ।’ আর প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন,’রাজ্যের বিধায়কদের মাইনে একলাফে চারগুণ হয়েগেল অথচ একজন মহিলা দশ বছর ধরে প্রাপ্য পেনশনের জন্য সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজ্যের একজন বাসিন্দার কাছে এটা বড়ই দুর্ভাগ্যের ।’
জেলা শাসক প্রিয়াংকা সিংলা ফোন না ধরায় এ বিষয়ে তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি । তবে সব শুনে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন,’আমি নতুন দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেছি।বিষয়টি শুনলাম। জেলা পরিষদ ওই মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে ।’।