ওরে কানহা,
আমি তোর দৈবকী মা বলছি,
তুই শুনছিস? শুনতে পাচ্ছিস?
তোর জন্মের সাথে সাথেই
যার মাতৃত্বের পূর্ণ আস্বাদ পাওয়ার কথা ছিল,
তোকে জন্ম দিয়েই যার অসীম সুখ সাগরে ভেসে যাওয়ার কথা ছিল,
তার যে কোনো অধিকারই নেই, ওরে!
তার যে কোনো স্বত্ত্ব নেই,
তোকে ঘিরে সর্বান্তকরণে সুখী হওয়ার
তার যে কোনো সাধ্যি নেই, কানহা!
বল না কানহা, বল না গোপাল আমায়,
কার ভাগ্য দোষে
আমাদের আর একসাথে থাকা হলো না,
হলো না বেড়ে ওঠা?
আমাদের যাপনকথা গাথা হলো না একই সুতোর গিঁটে!
কৃষ্ণ মা তো হয়েছি আমি, তোকে ধরেই পেটে
তবু তোকে হারানোর নিয়তি কেন আমারই ললাটে!
নাড়িকাটা ব্যথা ভোলার আগেই ভুলতে হয়েছে সুখ,
পাথর বুকে সইতে হয়েছে তোকে হারানোর দুখ্!
তবু জানিস গোপাল, জানিস বাছা আমার,
আজও ভুলিনি আমি সেই চরম শোক,
ভুলিনি আজও ক্ষণিকের দেখা, সেই চাঁদপানা মুখ।
আকুল বুকে কষ্ট চেপেই,
তোকে দিয়েছি তুলে, পাঁজর খুলে,
এক অন্য মায়ের কোলে।
যশোদা নন্দন, ওরে…
তুই যে আমারই নাড়িছেঁড়া ধন,
আমার প্রাণের ফসল,
ক্ষমা করিস তুই,
ক্ষমা করে দিস তোর এই দৈবকী মাকে,
ক্ষমা করিস আমায়।
যাকে বুক দিয়ে আগলে রাখার কথা ছিল,
জন্মের অচিরেই তাকে কাছছাড়া করেছি!
এ যে বিধির বিধান, বাছা!
নিয়তি খন্ডাব সে সাধ্য আমার কই, বল! কারুর কি থাকে?
ওরে এমনটা করতে যে আমি বাধ্য হয়েছি, কানহা।
নন্দের দুলাল তুই, ভালো থাক বাছা।
যশোদার গৃহকোন তোর ছোঁয়ায় আলোকিত হোক, পাক পরিপূর্ণতা,
সবার জীবন আলোকিত হোক তোকে কেন্দ্র করে।
আমি তোর দৈবকী মা,
নাহয় তোকে পাওয়ার সুখ হতে
বঞ্চিত থাকলাম আমি।
মায়ের কাছে সন্তানের প্রাণের চেয়ে
আর কিছু কি দামী হয় কখনো!
কারাগারের অন্ধকূপে বন্দী আমি মা।
আমি দাপরের কৃষ্ণ জন্মদাত্রী,
অভাগিনী তবু কৃষ্ণ গর্বে গরবিনী এক জীবনদাত্রী মা।
এ অহংকার আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
আমি কৃষ্ণের দৈবকী মা।
আমার পরিচয়, আমি কৃষ্ণের মা ।।