প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ সেপ্টেম্বর : শিশুর ক্ষুধা ও অপুষ্টির মোকাবিলা এবং মাতৃত্বের যত্নের পরিষেবা কর্মসূচি স্বরুপ গ্রামীণ এলাকায় চালু হয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।সেইসব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই এখন দেখা দিয়েছে পুষ্টিদায়ক খাবারের হাহাকার।শিশু ও প্রশুতিদের পাতে ডিম ও সবজি দেওয়ার সাধ থাকলেও সাধ্য হারিয়ে ফেলেছেন পূর্ব বর্ধমানের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির কর্মীরা। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণটাও যথেষ্টই চিন্তায় ফেলে দেওয়ার মত ।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির দাবি,’তিন মাস ধরে বরাদ্দ অর্থ না মেলাতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ছে ।’ এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে,অর্থ প্রাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশু ও প্রসুতিদের পাতে ডিম ও সবজি আর পড়ছে না !
আই সি ডি এস কর্মী সমিতির জেলার সহ সভানেত্রী সুরভি টুডু জানান,অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে চাল, ডাল সরাসরি সরকার থেকে পাঠায়।এছাড়া ডিম ও সবজির ’দামটা’ সরকার দেয়। কিন্তু তিনমাস হয়েগেল ডিম ও সবজির টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে রয়েছে। কেন বন্ধ ? কবে মিলবে সেই টাকা ? সে বিষয়ে কোন উত্তর নেই ! টাকা না দিলে কিভাবে সেন্টার চলবে? বাচ্চাদেরকেই বা কি ভাবে ডিম ,সবজি তুলে দেওয়া যাবে ? এই ব্যাপারেও সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। তাই পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে আই সি ডি এস কেন্দ্রগুলিতে ডিম ও সবজি ডেওয়া বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে সুরভি টুডু জানিয়েছেন ।
জেলার জামালপুর ব্লকের দুই আই সি ডি এস কেন্দ্রের দুই কর্মী মঞ্জু বাগ ও মৌমিতা সাধু খাঁ-র কথা অনুযায়ী,শিশুদের জন্য ডিম সেদ্ধ ভাত এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডিম সেদ্ধ ভাত এবং আলু বরাদ্দ রয়েছে। সেই মত আই সি ডি এস কেন্দ্র গুলিতে সোম,বুধ ও শুক্রবার ভাতের সঙ্গে গোটা ডিম সেদ্ধ দেওয়া হয় শিশুদের। মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার খিচুড়ির সঙ্গ অর্ধেক ডিম দেওয়া হয় ।তবে থাকে না কোন সবজি। কিন্তু গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের যদিও ভাত আর ডিম সেদ্ধর সঙ্গে একটু আলু মেলে । কেন্দ্রের কর্মীদের কথা অনুযায়ী,এই খাবারের জন্য বরাদ্দ খুবই নগণ্য। শিশুদের জন্য দৈনিক ৬ টাকা ৫০ পয়সা, মায়েদের জন্য ৭ টাকা ৩৪ পয়সা এবং প্রত্যেক বিপদ সূচক শিশুর জন্য ৯ টাকা বরাদ্দ করা রয়েছে। এত কম অর্থে খাবার দেওয়ায় অসম্ভব। তবুও দিতে হয় ।
আই সি ডি এস কেন্দ্রের কর্মীরা অভিযোগে বলেন, গত তিন মাস ধরে ডিম ও সবজির টাকা তারা পাচ্ছেন না ।এতদিন দোকানে ধার করে বা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে সেন্টার চালিয়েছেন। ধার অনেক হয়ে যাওয়ায় ডিম ও সবজির দোকনদাররা আর ধার দিতে চাইছেন না।
বিষয়টি নিয়ে বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও লাভ কিছু হয় নি। টাকাও মেলেনি । এমন অবস্থা অবস্থা জারি থাকলে শেষে সেন্টার বন্ধ করেই রাখতে হবে।
এনিয়ে কটাক্ষ করটে ছাড়েনি বিরোধীরা । জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’সরকারটা তো
খেলা, মেলার সরকার ।সেইসবে টাকা খরচ করছে
। ২৪ শের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এবছর আবার ক্লাব গুলিকে দুর্গাপুজোর অনুদানের টাকা
বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । হয়তো ভোট রাজনীতির হিসেব নিকেশে ফায়দা মেলে না বলেই শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবারের খরচ দেবার বেলায় সরকার হাত গুটিয়ে নিচ্ছে ।’ যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার দাবি করেছেন,টেকনিক্যালি একটা সমস্যা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।।