প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ আগস্ট : পথ দেখিয়ে ছিলেন বায়রন বিশ্বাস । তার পর থেকে বঙ্গ রাজনীতিতে ’বায়রন মডেল’ অনুসরণ করা জন প্রতিনিধিদের সমাহার যেন বেড়েই চলেছে ।এখন গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও ’বায়রন মডেলে’ আঁকড়ে ধরা শুরু করে দিয়েছেন। সদ্য ’বায়রন মডেলে’ নাম লেখানো এমনই একজন জনপ্রতিনিধি হলেন পূর্ব বর্ধমানের রাজু প্রামাণিক।খাতায় কলমে তিনি সিপিএমের প্রতীকে নির্বাচিত জামালপুর ব্লকের পাড়াতল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। কিন্তু তাতে আর কি যায় আসে।ভোটের ফল ঘোষণার পর একমাস কাটতে না কাটতে বামপন্থী আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে রাজু তৃণমূলে যোগদান সেরে ফেলেছেন । তা দেখে বেজায় চটে যাওয়া বাম নেতারা বলছেন,’গদ্দার রাজু তৃণমূলের কাছে বিক্রী হয়ে গিয়েছে ।’ আর ধুরন্ধর রাজু তাঁর সাফাইয়ে কখনও বলেছেন, ’চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়েছে।আবার সাংবাদিকের কাছে বলেছেন,’তিনি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে গিয়েছেন।’
বাম ও কংগ্রেসেের জোট প্রার্থী হয়ে এই রাজ্যের সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেসের
প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ী হন বায়রন বিশ্বাস। তারপর দু’মাস কাটতে না কাটতে কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরীর হাত ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে ফেলে বায়রন
। আর বায়রনের এই ভোলবদল রাজ্য রাজনীতিতে
তোলপাড় ফেলে দেয়। কিন্তু তাতে কি হবে !সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বায়রনই হয়ে যান ’মডেল’।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষনার দিনেই জেলাবাসী দেখেছে বায়রন মডেলে আকৃষ্ট হয়ে পড়া বেশ কয়েকজন সিপিএম প্রার্থীকে। সিপিএমের প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ী হওয়া জেলার কালনার সহজপুরের ১৬৯ নম্বর সংসদের প্রাথী গীতা হাঁসদা
গণনা কেন্দ্রেই সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করে বসেন । এর ২৪ ঘন্টার মধ্যে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড
পঞ্চায়েতে জয়ী তিন সিপিএম প্রার্থী এবং এক নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগদান করেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাদের হাতে তৃণমূলের ঝাণ্ডা তুলেদেন। তবে এত কিছুর মধ্যেও কোন চাপ ও হুমকির কাছে নতি স্বীকার করে ’বায়রন’ হতে চাননি রায়না-১ ব্লকের নড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রামের জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী মিনতি মাণ্ডি।
কিন্তু সিপিএমের প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ী হওয়া পড়াতলের সহাপুর গ্রামের ১৩১ বুথের সদস্য রাজু প্রামাণিক যে তলে তলে জামালপুরে ’বায়রণ মডেলে’ প্রতিষ্ঠার ছক কষে নিয়েছেন তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি সিপিএম নেতারা। যা ফাঁস হয় দিন দুই আগে অতি সন্তর্পণে ব্লক তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে রাজু তৃণমূলে যোগদান করার পর । সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ছবি দেখে সিপিএম নেতারা নিশ্চিৎ হন,জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলক মাঝি,ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ভূতনাথ মালিক তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা রাজুর হাতে তুলে দিয়ে তাকে তৃণমূলে বরণ করে নিয়েছেন ।
এই প্রসঙ্গে মেহেমুদ খাঁন বলেন,’মা মাটি মানুষের সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামিল হতে চেয়ে ২০ আগস্ট সিপিএমের সদস্য রাজু প্রামাণিক আমাদের
কাছে আবেদন করেছিল । সেই আবেদনের বিষয়টি জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কে জানানো হয়। তিনি সবুজ সংকেত দেওয়ার পরেই সিপিএমের সদস্য রাজু প্রামাণিককে রবিবার আমরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করাই। আর কিছু দিনের মধ্যে বিরোধী দলের আরো অনেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করবেন বলে মেহেমুদ খাঁন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন । বিধায়ক অলক মাঝি সিপিএমের সদস্য রাজু প্রামাণিককে ভাই সন্মোধন করে বলেন,’তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন কাজ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৃণমূলে যোগদান করেছে। এরজন্য আমি রাজুকে সাধুবাদ জানাই ।’
তৃণমূল নেতৃত্ব এমনটা দাবি করলেও সাহাপুর গ্রাম নিবাসী ব্লকের সিপিএম নেতা কাশিনাথ সরকার মঙ্গলবার বলেন,’রাজু প্রামাণিক তৃণমূলে যোগদান করেছে সেটা আমরা অনেক পরে জানতে পারি ।’ কাশিনাথ বাবুর স্পষ্ট দাবি,’এলাকার ভোটারদের সঙ্গে প্রতাড়না করে সিপিএম সদস্য রাজু প্রামাণিক মোটা টাকায় তৃণমূলের কাছে বিক্রি হয়েছে ।’ রাজু অবশ্য টাকায় বিক্রি হবাব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন । তিনি এদিন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন,’এলাকার মানুষের উন্নয়ন কাজ করার জন্য আমি তৃণমূলে যোগদান করেছি।’ তাহলে তৃণমূলে যোগদানের পর গ্রামে ফিরে কেন বললেন তৃণমূলের নেতারা চাপ দিয়ে আপনাকে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছে ? এই প্রশ্নে প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরো ধুরন্ধর রাজুর সাফাই, ‘গ্রামের সিপিএমের লোকজন আমায় ক্যামেরায় সামনে ওই কথা বলানো করিয়েছিল,তাই বলতে হয়েছে ।’ সব শুনে বিজেপির যুব মোর্চার জামালপুরের কনভেনার অজয় ডকাল বলেন, ‘বালি,পাথর ,গরু লুটের অভ্যাস তৃণমূলের রয়েছে।এখন তৃণমূল বিরোধী দলের প্রাথীদের লুট করা শুরু করেছে ।’।