এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেঙ্গালুরু,২৬ আগস্ট : চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরুর যে স্থানে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার অবতারণ করেছে, সেই জায়গার নামকরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । ওই স্থানটিকে ‘শিবশক্তি’ নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার বেঙ্গালুরু শহরে চন্দ্রযান- ৩ মিশনের ইসরো-এর টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কমান্ড নেটওয়ার্ক সেন্টারে (ISTRAC) বক্তৃতা দেন । মিশনে যুক্ত বিজ্ঞানীসহ সকলকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী । ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে স্পেশ মিশনে টাচ ডাউন পয়েন্টের একটা নাম দেওয়ার বৈজ্ঞানিক পরম্পরা আছে । চাঁদের যে জায়গায় আমাদের চন্দ্রযান অবতারণ করেছে,ভারত ওই স্থানের নামকরণ করার নির্ণয় নিয়েছে । যে স্থানে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার অবতারণ করেছে, এখন ওই পয়েন্টটি ‘শিবশক্তি’ নামে পরিচিত হবে ।’ চন্দ্রযান মিশনে যুক্ত মহিলা দলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষভাবে প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী । ইসরোর মহিলা অভিনন্দন জানাতে গিয়ে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বলেন,’আমাদের এই আত্মা হলেন শিব। এছাড়াও এই মিশনে নারী বিজ্ঞানীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারী হল আত্মার শক্তি । সৃষ্টির লালন ও ছন্দের পেছনেও রয়েছে নারীশক্তির প্রেরণা। নারীর শক্তি রয়েছে সমগ্র বিশ্বের চেতনায়। শিব ও শক্তি যোগ হলে তা শিব শক্তিতে পরিণত হয়।’
পাশাপাশি চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্যকে ‘ভারতের ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাসে একটি অসাধারণ মুহূর্ত’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন যে ২০১৯ সালে, চন্দ্রযান-২ ল্যান্ডারটি চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গাটিকে “ত্রিরঙ্গা” হিসাবে চিহ্নিত হবে। আর দেশের যুব শক্তিকে প্রেরণা দেওয়ার জন্য ২৩ আগস্ট দিনটি ন্যাশানাল স্পেস ডে হিসাবে পালন করা হবে । এই দিনটি যখনই পালন করা হবে, আমাদের সর্বদা উদ্বুদ্ধ করবে ।’
ইসরো-এর বিজ্ঞানীদের মাঝে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন,’ইসরো-এর সাফল্যে আমি খুবই খুশি । ইসরো-এর সাফল্যে গোটা দেশ গর্বিত। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং আমি আপনার সাথে দেখা করে আনন্দিত।’ এদিকে, ইসরোর বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা ও সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী মোদী । তিনি বলেন, আমরা যা অর্জন করেছি তা অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে আমার স্যালুট । আমরা এমন কিছু অর্জন করেছি যা অন্য কোনো দেশ কখনো করতে পারেনি। ভারত বর্তমানে চাঁদে অবস্থান করছে। আমার শরীর-মন অবিভূত । মোদী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আপনারা আমাদের দেশের মর্যাদাকে উচ্চ স্তরে নিয়ে গেছেন । আপনারা যতই উদযাপন করুন না কেন, তা সামান্যই। চাঁদে প্রজ্ঞানের পরাক্রম দেখে আমি খুশি। গোটা বিশ্ব ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে মেনে নিয়েছে। আপনাদের সকলের এই অর্জন অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। আপনারা সকলেই ভারতের স্বপ্নকে সত্যি করেছেন। আমি বিদেশে ছিলাম, কিন্তু আমার হৃদয় সর্বদা আপনাদের সাথে ছিল ।
ইসরোর অফিসে পৌঁছানোর পরে, ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে পুরো অবতরণ প্রক্রিয়াটি কীভাবে হয়েছিল তার একটি প্রদর্শনী করেন । সোমনাথ বিক্রম ল্যান্ডারের ক্যামেরায় রেকর্ড করা প্রথম ছবি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। তিনি চন্দ্রযান-২ অরবিটার দ্বারা ধারণ করা চন্দ্রযান-৩-এর ছবি এবং ল্যান্ডারের একটি মডেল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,’চাঁদের অন্ধকার দিককে আলোকিত করেছে ভারত। প্রত্যেক ভারতীয় মনে করে যে জয় তারই হয়েছে,কারণ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি ।’ তিনি বলেন যে ২৩ আগস্ট যখন ভারত চাঁদে অবতরণ করেছিল তখন কিছু দৃশ্য তিনি ভুলতে পারেননি ।
শিক্ষার্থীদেরকে মহাকাশ প্রযুক্তি অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে মহাকাশ প্রযুক্তির প্রচার করতে এবং দেশকে জটিল সমস্যার আধুনিক সমাধান অন্বেষণে সহায়তা করার জন্য জাতীয় ও রাজ্য স্তরে ইসরোর সহযোগিতা করা উচিত। মোদী বলেন যে my.gov.in দেশের সমস্ত যুবকদের জন্য চন্দ্রযান -৩ নিয়ে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করবে।
ইসরোর কন্ট্রোল রুমে পৌঁছানোর আগে,প্রধানমন্ত্রী মোদী রাস্তার দু’জায়গায় থামেন । এইচএএল বিমানবন্দরের বাইরে একটি বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি “জয় বিজ্ঞান জয় অনুসন্ধান” স্লোগান দেন। পরে জালাহল্লি সিগন্যালে তিনি থামলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান অনেকেই ।।