এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৩ আগস্ট: আজ বুধবার ভারতবাসীর জন্য একটা উল্লেখযোগ্য দিন । এদিন সন্ধ্যা ৬.০৪ নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩ । শুধু ভারতই নয়,গোটা বিশ্বের নজর ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশনের দিকে । এদিকে চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্য কামনায় দেশ জুড়ে চলছে পূজার্চনা । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেনারসের (Banaras) দশাশ্বমেধ ঘাটে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ গঙ্গারতির । এখন নরম অবতরণের (Soft Landing) মুহুর্তের স্বাক্ষী হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন সকলে । ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে,সিস্টেম নিয়মিত চেক হচ্ছে । মসৃণ অবতরণ অব্যাহত রয়েছে। মিশন অপারেশন কমপ্লেক্স (MOX) শক্তি ও উত্তেজনায় মুখরিত !’
‘প্রজ্ঞান’ নামের রোভারটি ‘বিক্রম’ ল্যান্ডার ছেড়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে ভ্রমণ করবে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করতে, যা চাঁদ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। গোটা বিশ্ব ভারতের এই মিশনে আগ্রহী কারণ বিশ্বের কোনও দেশ এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে পারেনি । সম্প্রতি, রাশিয়া তার চন্দ্র মিশন ‘লুনা-২৫’ নিয়ে এখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি বিধ্বস্ত হয় এবং মিশন ব্যর্থ হয়।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩-এর নরম অবতরণ অবশ্যই ভারতকে মহাকাশ শক্তিতে পরিণত করবে। তাই চাঁদের পৃষ্ঠে নরম অবতরণের ক্ষেত্রে আমেরিকা, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হয়ে উঠবে ভারত। সফট ল্যান্ডিংয়ের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইতিমধ্যেই কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে ।
অবতরণের চারটি ধাপ থাকবে :-
প্রথমত,রুক্ষ ব্রেকিং ফেজ
- এই সময়ে ল্যান্ডারটি ল্যান্ডিং সাইট থেকে 750 কিমি দূরে থাকবে এবং গতি হবে 1.6 কিমি/সেকেন্ড।
- এই পর্বটি ৬৯০ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। সেই সময়ে বিক্রমের সমস্ত সেন্সর ক্যালিব্রেট করা হবে।
- ৬৯০ সেকেন্ডে অনুভূমিক গতি হবে ৩৫৮ এম/এস এবং নিম্নগামী গতি হবে ৬১ এম/এস ।
দ্বিতীয়ত, উচ্চতা হোল্ড ফেজ - বিক্রম চন্দ্র পৃষ্ঠের ছবি তুলবে এবং পূর্ব-বিদ্যমান ফটোগ্রাফের সাথে তুলনা করবে।
- চন্দ্রযান-২-এর সময় এই পর্বটি ছিল ৩৮ সেকেন্ড, যা এখন কমিয়ে ১০ সেকেন্ড করা হয়েছে ।
- এদিকে অনুভূমিক বেগ হবে ৩৩৬ এম/এস এবং উল্লম্ব বেগ হবে ৫৯ এম/এস ।
তৃতীয়ত,ফাইন ব্রেকিং ফেজ - এই পর্যায়টি ১৭৫ সেকেন্ড স্থায়ী হবে, যার গতি শুণ্যে নেমে আসবে।
- ল্যান্ডারের অবস্থান সম্পূর্ণ উল্লম্ব হবে।
- পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৮০০ মিটার থেকে ১,৩০০ মিটারের মধ্যে হবে।
- বিক্রমের সেন্সর সক্রিয় হবে এবং উচ্চতা পরিমাপ করা হবে।
- ফটোগুলি পুনরায় নেওয়া হবে এবং তুলনা করা হবে।
চতুর্থত,টার্মিনাল ডিসেন্ট ফেজ - পরবর্তী ১৩১সেকেন্ডের মধ্যে, ল্যান্ডারটি পৃষ্ঠ থেকে ১৫০ মিটার উপরে পৌঁছে যাবে।
- ল্যান্ডারে লাগানো একটি বিপদ সনাক্তকরণ ক্যামেরা পৃষ্ঠের ছবি তুলবে।
- বিক্রমের উপর লাগানো একটি বিপদ সনাক্তকরণ ক্যামেরা একটি গো-নো-গো পরীক্ষা পরিচালনা করবে।
- সবকিছু ঠিক থাকলে, বিক্রম ৭৩ সেকেন্ডের মধ্যে চাঁদে অবতরণ করবে।
- যদি নো-গো শর্ত থাকে তবে এটি ১৫০ মিটার সরানোর পরে বন্ধ হয়ে যাবে।
- আবার পৃষ্ঠ পরীক্ষা করা হবে
- অবতরণের শেষ ১৫ মিনিট সবচেয়ে কঠিন হবে
চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিংয়ে সময় লাগবে ১৫ থেকে ১৭ মিনিট। এই সময়কালকে ‘সন্ত্রাসের 15 মিনিট’ বলা হয়। ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশন সফল হলে, আমাদের দেশ হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ। চাঁদে অবতরণের দুই ঘন্টা আগে, ল্যান্ডার মডিউলের অবস্থান এবং চাঁদের অবস্থার উপর ভিত্তি করে সেই সময়ে অবতরণ করা উপযুক্ত হবে কি না তা নির্ধারণ করবে। যদি কোনও কারণ উপযুক্ত না হয় তবে ২৭ আগস্ট অবতরণ করা হবে। রবিবার দুপুর ১.৫০ নাগাদ চন্দ্রযানের দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশন সম্পন্ন হয়েছিল। এর পর চাঁদ থেকে ল্যান্ডারের সর্বনিম্ন দূরত্ব হয় ২৫ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। ডিবুস্টিং মহাকাশযানকে ধীর করে দেয়।
অবতরণের পর কি হয়?
ধুলোর ঝড় পর্ব মিটে যাওয়ার পর বিক্রম ফের সক্রিয় হবে এবং ফের যোগাযোগ করবে। এরপর র্যাম্প খুলে যাবে এবং প্রজ্ঞান রোভারটি র্যাম্প থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে। বিক্রম ল্যান্ডার প্রজ্ঞানের ছবি তুলবে এবং প্রজ্ঞান বিক্রমের ছবি তুলবে। এই ছবিগুলো পৃথিবীতে পাঠানো হবে ।
চন্দ্রযান-৩ মিশনের খরচ ৬০০ কোটি টাকা। এটি ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে শক্তিশালী রকেট এলভিএম মার্ক ৩ দিয়ে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল । নরম অবতরণের এক দিন আগে মঙ্গলবার (২২আগস্ট) ইসরো জানিয়েছিল যে ‘চন্দ্রযান-৩ মিশন’ নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী কাজ করছে । ইসরোর স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ডিরেক্টর নীলেশ দেশাই বলেছেন যে যদি ২৩ আগস্ট (ল্যান্ডার মডিউলের ক্ষেত্রে) কোনও স্বাস্থ্য প্যারামিটার অস্বাভাবিক পাওয়া যায় তবে অবতরণ চার দিন বিলম্বিত হবে, যার অর্থ এটি ২৭ আগস্ট অবতরণ করবে ।।