এইদিন ওয়েবডেস্ক,রিয়াধ,২২ আগস্ট : ইয়েমেন থেকে উপসাগরীয় রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টাকারী ইথিওপিয়ান অভিবাসীদের উপর সৌদি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এলোপাথাড়ি গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) । প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সৌদি সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের উপর “বৃষ্টির মতো” গুলি চালিয়েছে এবং গত বছর থেকে এযাবৎ শতাধিক নিহত হয়েছে ।
ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের একজন ২০ বছর বয়সী মহিলা, এইচআরডব্লিউ-এর সাক্ষাৎকারে বলেছেন,সৌদি সীমান্ত রক্ষীরা একদল অভিবাসীর উপর গুলি চালায় যাদের তারা সবেমাত্র হেফাজত থেকে মুক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন,’তারা বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর গুলি চালায়। আমি একজন লোককে সাহায্যের জন্য ডাকতে দেখেছি, সে তার দুটি পা হারিয়েছে । সে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আপনারা কি আমাকে এখানে ফেলে রেখে যাচ্ছেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না’। কিন্তু আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি কারণ আমরা আমাদের জীবনের জন্য দৌড়াচ্ছিলাম ।’
এইচআরডব্লিউ-এর গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান বলেছেন,’সৌদি কর্মকর্তারা এই দুর্গম সীমান্ত এলাকায় শত শত অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীকে হত্যা করছে । সৌদি ভাবমূর্তি উন্নত করতে পেশাদার গল্ফ, ফুটবল ক্লাব এবং প্রধান বিনোদন ইভেন্টগুলি কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যয় করলেও এই ভয়ঙ্কর অপরাধ থেকে মনোযোগ সরানো উচিত নয় ।’
তবে সৌদি সরকারের একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয় । হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সৌদি- ইয়েমেনি সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ইথিওপিয়ানদের গুলি করার বিষয়ে অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর ভিত্তি করে নয় বলে দাবি করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ ।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক গোষ্ঠীটি জানিয়েছে,সৌদি আরব এবং ইয়েমেনে ইথিওপিয়ান অভিবাসীদের উপর প্রায় এক দশক ধরে নির্যাতন নথিভুক্ত করেছে, তবে সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডগুলি ব্যাপক ও নারকীয় এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের হিসাবে গন্য হতে পারে ।
গত বছরও জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী,বছরের প্রথম চার মাসে দক্ষিণ সৌদি আরব এবং উত্তর ইয়েমেনে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা আন্তঃসীমান্ত আর্টিলারি শেলিং এবং ছোট অস্ত্রের গোলাগুলিতে প্রায় ৪৩০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছে । ওই বছরের মার্চে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ইথিওপিয়ানদের প্রত্যাবাসন শুরু হয়। ইথিওপিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয় বলেছে যে কয়েক মাস ধরে তার প্রায় ১,০০,০০০ নাগরিককে দেশে পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠির কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু উত্তর ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণকারী হুথি বিদ্রোহীরা এইচআরডব্লিউ-এর একটি চিঠির জবাবে সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা “ইচ্ছাকৃতভাবে অভিবাসী ও ইয়েমেনিদের হত্যার” অভিযোগ করেছে ।
এছাড়া আশ্রয়প্রার্থীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং পাথর ও লোহার বার দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে । হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের উপর প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের যে কোনো নীতি বন্ধ করার জন্য রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং জাতিসংঘকে কথিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ।।