এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৫ আগস্ট : বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামির কুখ্যাত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ছিল হিন্দুদের ত্রাস । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কাতারে কাতারে হিন্দুনারী ধর্ষণ- গনধর্ষণে ইন্ধনদাতা ও ধর্ষণকারী ছিল এই দেলাওয়ার হোসেন । পাকিস্তান পন্থী ওই কট্টরপন্থী নেতা হিন্দু পাড়ায় ঢুকে ধর্ষণ- গনধর্ষণ অগ্নিসংযোগ, লুটপাট- ভাংচুর, হত্যা এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ বহু অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল । মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তার আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ । কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে জামায়াত ইসলামির ওই কুখ্যাত নেতাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমইউ) ভর্তি করা হয়েছিল । অবশেষে সোমবার (১৪ আগস্ট ২০২৩) রাত পৌনে নয়টার দিকে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় । বাংলাদেশের জিহাদিদের দল দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে আদর্শ বলে মনে করে । তাই সাঈদীর মৃত্যুতে এখন শোকে ভেঙে পড়েছে তারা । মৃত্যুর খবর চাওড় হতেই হাসপাতালে কট্টরপন্থীদের ঢল নামে ।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল । যেকারনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সময় সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষেই অস্ত্র ধরেছিল দেলাওয়ার । পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের শাসনভার এলে দেলাওয়ারকে ‘রাজাকার’ ঘোষণা করা হয় এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় । কিন্তু যে পরিমান অপরাধ করেছিল দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, তাতে অনেকেই এই সাজাকে ‘গুরুপাপে লঘুদণ্ড’ বলে অবিহিত করেন । শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আশা করেছিলেন ফাঁসিতে ঝোলানো হবে সাঈদীকে ।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ‘সোজাসাপটা ২’-এর ফেসবুক পেজে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর কিছু মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের নজির তুলে ধরা হয়েছে । নিম্নে তা তুলে ধরা হল :-
১) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল সাঈদী । পাকিস্তান সেনার সহায়তায় সে নিজের দলবল নিয়ে বাংলাদেশের মাছিমপুর গ্রামের হিন্দুপাড়া চড়াও হয়ে ঘরবাড়ি লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয় । নিরস্ত্র হিন্দুরা আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালাতে শুরু করলে তাদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হয় । খুন হন ১৩ জন হিন্দু । নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শরত চন্দ্র মণ্ডল, বিজয় মিস্ত্রী, উপেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, সুরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, মতিলাল মিস্ত্রী, যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল, সুরেশ মণ্ডলসহ আরও অজ্ঞাত ব্যক্তি ।
ওই দিনেই সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল মাছিমপুর হিন্দু পাড়ায় গিয়ে মনীন্দ্র পসারী ও সুরেশচন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় । সাঈদী নিজেও রাস্তা পাশে বসবাসকারী হিন্দুদের বহু ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল । কালিবাড়ি, মাছিমপুর, পালপাড়া, শিকারপুর, রাজারহাট, কুকারপাড়া, ডুমুরতলা, কালামতলা, নওয়াবপুর, আলমকুঠি, ডুকিগাথি, পারেরহাট এবং চিংড়াখালিসহ অসংখ্য গ্রামে হিন্দুদের বেছে বেছে নিশানা করে জামায়াত ইসলামি নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী । লুটপাট, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি হিন্দু মহিলা ও মেয়েদের উপর চলে পাশবিক নির্যাতন ।
২) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাঈদী তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সদর থানার এলজিইডি ভবনের পিছনে ও ধোপাবাড়ির সামনে হিন্দুপাড়া ঘিরে ফেলে,নির্বিচারে গুলি চালানো হয় । গুলিতে প্রাণ হারান দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, পুলিন বিহারী ও মুকুন্দ বালাসহ বহু মানুষ ।
৩)১৯৭১ সালের ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে তার জিহাদি বাহিনী পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাকে স্বাগত জানায় । এরপর পারেরহাট বাজারে বসবাসকারী আওয়ামী লীগ নেতা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকান পাট পাকিস্তানী সেনাকে চিনিয়ে দেয় সাঈদী । পাকিস্তানী সেনার সাহায্যে চলে দেদার লুটপাট । সাঈদী নিজে স্থানীয় সম্পন্ন হিন্দু মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের সোনা ও রুপো লুট করে ।
৪) সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র কট্টরপন্থী দল ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫ টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিসাবালি, সুকাবালি, সতিশবালার বাড়ি অন্যতম । সাঈদীর ইন্ধনে তার জঙ্গিবাহিনী বিসাবালীকে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে ।
৫)সাঈদীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের জঙ্গিবাহিনী পারেরহাট বাজারের হিন্দুপাড়ায় গিয়ে ১৪ জন হিন্দুকে ধরে এক দড়িতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাদেরকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয় ।
৬)মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে এক সকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের সন্ত্রাসী দল সদর থানার হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়া আক্রমণ করে ।শেফালী ঘরামি ও মধুসূদন ঘরামি এক দম্পতি ছাড়া বাকিরা সবাইভ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । শেফালীদেবীকে সন্ত্রাসী দল গনধর্ষণ করে । তারপর একে একে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ।
৭)সাঈদীর নেতৃত্বে দলবল হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরণী শিকদার, নির্মল শিকদার, শ্যামকান্ত শিকদার, বাণীকান্ত শিকদার, হরলাল শিকদার, প্রকাশ শিকদারসহ ১০ জন হিন্দুকে ধরে পাকিস্তানি সেনার হাতে তুলে দেয় । ওই ১০ জনকে পাকিস্তান সেনা নির্মমভাবে নির্যাতন করে খুন করার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
৮) পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তাঁর তিন বোনকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয় দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী । সেখানে ওই তিন হতভাগ্য তরুনীকে আটকে রেখে তিন দিন ধরে গনধর্ষণ করে পাকিস্তানের সেনা । পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় ।
৯)এছাড়া মধুসূদন ঘরামী, কৃষ্ট সাহা, ডা. গণেশ সাহা, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, নারায়ণ পাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, হরি রায় জুরান, ফকির দাস, টোনা দাস, গৌরাঙ্গ সাহা, হরিদাস, গৌরাঙ্গ সাহার মা ও তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কামাল রাণীসহ ১০০ থেকে ১৫০ জন হিন্দুকে জোর করে ধর্মান্তরিত করেছিল দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী । এর বাইরেও অসংখ্য হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ- গনধর্ষণ,খুন, লুটপাট,ঘরবাড়ি ও দোকান অগ্নিসংযোগে অভিযুক্ত ছিল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামির ওই নেতা ।
এই প্রকার এক সন্ত্রাসী ও মানবতা বিরোধী মৃত্যুর পর কট্টরপন্থীদের মধ্যে শোকের আবহে বাংলাদেশের হিন্দুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে । আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও । কারন সাঈদীর কবরস্থ করার প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে লক্ষাধিক মানুষের ঢল । ইসলামি কট্টরপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী ও পাকিস্তানপন্থী ওই বিপুল সংখ্যক মানুষ একদিন রাষ্ট্রের জন্যই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল ।।