এইদিন ওয়েবডেস্ক,রাখাইন,১০ আগস্ট : সোমবার রাখাইন রাজ্যের উপকূলে ৫০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বহনকারী একটি মোটরবোট ডুবে ৩ জনের মৃত্যু হয়ে । এখনো নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ডজন খানেক মানুষ । স্থানীয় সূত্রে খবর,ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছে সমুদ্র সৈকতে জেলেরা দুই মহিলার মৃতদেহ এবং মঙ্গলবার তৃতীয় মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে ৷
ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, সোমবার গ্রামের কাছে থেকে জীবিত আটজনকেও উদ্ধার করা হয়েছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন,’বাসারের জেলেরা কিছু জীবিত যাত্রী এবং দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা জীবিতদেরও নিয়ে গেছে, আমি নিশ্চিত নই তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।’ স্থানীয় এক গ্রামবাসীর কথায়,’স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর নিখোঁজদের খুঁজে বের করার কোনও চেষ্টা করেনি । স্থানীয় লোকজনও শাসক কর্মকর্তাদের ভয়ে অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকে ।’ রাখাইন ডেইলির মতে, জান্তা-নিযুক্ত রাজ্য প্রশাসনের ফেসবুক পেজে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন যে তারা রাথেডাং টাউনশিপের আহ নাউক পাইন গ্রাম থেকে মালয়েশিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন,সেই সময় তাদের নৌকাটি ডুবে যায় ।
স্থানীয়রা বলছেন, উত্তর রাখাইন উপকূলে পয়লা আগস্ট থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল বাতাস বইছে, যেকারণে বেশিরভাগ জেলেরা জলে নামতে ভয় পাচ্ছে । তাই ডুবে যাওয়া ওই মোটরবোটের যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য কেউ ছিল না তখন । ফলে বেঘোরে অতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেছে । সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে এই অঞ্চলের ৮০ টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত,রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে । ২০১৭ সালে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনার সামরিক “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন” থেকে বাঁচতে প্রায় এক মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় । যারা দেশে রয়ে গেছে তারা তাদের চলাফেরা এবং অন্যান্য বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলে জীবিকা নির্বাহ অসম্ভব করে তুলেছে । এক গ্রামবাসী বলেন,’দেশে কাজ না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই দলটি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিল ।’
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উপচে পড়া নৌকাগুলি সমুদ্রে ডুবে যাওয়ায় বিগত ৬-৭ বছরে শত শত রোহিঙ্গা সমুদ্রে তলিয়ে মারা গেছে । এছাড়া অগনিত রোহিঙ্গা মায়ানমার বা থাই নৌবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করছে । চলতি বছরের
১৪ মে সিত্তওয়ের কাছে রাখাইন রাজ্যের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোচা আঘাত হানার পর এখনো শত শত রোহিঙ্গাও নিখোঁজ । আশঙ্কা করা হচ্ছে যে তারা আর জীবিত নেই । ওই সমস্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত,তারা শিবিরে বাস করছিলেন,কিন্তু মারাত্মক ঝড়ের আগে সরকার কর্তৃক তাদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি ।।