এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২২ এপ্রিল : ভোট ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম । কোথাও ঘটল বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনা । কোথাও উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ । এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই বিজেপি প্রার্থীকে ঘেরাও করে রাখা ও বিজেপির নির্বাচনী এজেন্টের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে । এনিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেতুগ্রামের বিজেপি প্রার্থী মথুরা ঘোষ । যদিও বিজেপির তোলা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।
বৃহস্পতিবার সকাল হতেই কেতুগ্রাম বিধানসভায় একের পর এক এলাকা থেকে অশান্তির খবর পাওয়া যায় । জানা গেছে, এদিন সকালে রাজুর অঞ্চলের রাজুর গ্রামের বেশ কিছু বিজেপি কর্মী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন । সেই সময় তাঁদের লক্ষ্য করে তৃণমূলের লোকজন বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায় । খবর পেয়ে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ৷ ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ।
সকালের এই ঘটনার পর ভোট পর্ব শুরু হতেই কেতুগ্রামের একাধিক এলাকা থেকে অশান্তির খবর আসতে থাকে । কেতুগ্রামের রাইখা গ্রামে ভোটকেন্দ্রের অদুরে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী । তবে বোমাবাজির ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই । এছাড়া কেতুগ্ৰামের ব্যাহ্মনডিহি গ্রামে লিটন মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মীকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । এমনকি কেতুগ্ৰামের ৯৩ ও ৯৪ নম্বর বুথের কাছে বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ।
তবে কেতুগ্রামের রাজুর অঞ্চলের খাসপুর গ্রামে সব থেকে বেশি উত্তেজনা ছড়ায় বলে খবর ।
কেতুগ্রাম বিধানসভার বিজেপির নির্বাচনী এজেন্ট তথা বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি বিমল অধিকারী বলেন, ‘এদিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ আমরা খবর পাই কেতুগ্রামের রাজুর অঞ্চলের খাসপুর গ্রামের ১১০ ও ১১১ নম্বর বুথে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী ভোটারদের বুথে যেতে দিচ্ছে না । খবর পেয়ে আমাদের দলীয় প্রার্থী সেখানে পৌঁছন । তার ঠিক মিনিট দশেক পরেই কয়েকজন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে আমি সেখানে যাই । গিয়ে দেখি বুথের সামনে প্রচুর সংখ্যক তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী জড়ো হয়ে আছে । আমাদের গাড়িটা সেন্ট্রাল ফোর্সের ক্যাম্পের পাশে দাঁড় করানো হয় । আমার সকলেই তখন গাড়িতেই বসেছিলাম । গাড়িতে বসেই আমি বিষয়টি নিয়ে সেন্ট্রাল ফোর্সদের সঙ্গে কথা বলছিলাম । সেই সময় বুথের দিক থেকে ৫০-৬০ জনের একটি দল লাঠি,বাঁশ,ইঁট,পাথর নিয়ে আমাদের গাড়ির উপর চড়াও হয় । গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন ও সমস্ত জানালার কাঁচ ভেঙে দেয় । আমাকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে প্রাণে মারার চেষ্টা করে দুষ্কৃতিরা । গাড়ির চালক আমার একটা পা টেনে ধরে আমায় ফের গাড়িতে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । তারপর কোনও রকমে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে আসে চালক । আমাদের গাড়ির চালকের তৎপরতায় খুব অল্পের জন্য আমি প্রাণে বেঁচে যাই।’
জানা গেছে,বিজেপির নির্বাচনী এজেন্টের গাড়ি যাওয়ার আগেই পৃথক একটি গাড়িতে চড়ে খাসপুরে যান বিজেপি প্রার্থী মথুরা ঘোষ । কিন্তু তিনি সেখানে যেতেই তৃণমূলের লোকজন তাঁকে কার্যত ঘেরাও করে রাখে বলে অভিযোগ ।
মথুরা ঘোষের অভিযোগ, ‘খাসপুর গ্রামের ওই দুই বুথের ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না শুনে আমরা সেখানে যাই । দেখি তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী বুথ ঘিরে রেখেছে । আমি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই । সাধারন মানুষ আমার কথা শুনে ভোট দিতে শুরুও করেন । আর ঠিক তখনই কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজের আশ্রিত দুষ্কৃতিরা আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করার উপক্রম করে । তখন আমি প্রাণভয়ে ১১০ নম্বর বুথের ভিতরে ঢুকে পড়ি । প্রায় আধ ঘন্টা পর কেতুগ্রাম থানার পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ।’ এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি প্রার্থী । তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সামনেই তৃণমূলের লোকজন তাঁকে ঘেরাও করেছিল । অথচ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । এমনকি তিনি যাতে ঘটনার ভিডিও করতে না পারেন তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাঁর স্মার্টফোন কেড়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ মথুরাবাবুর। পাশাপাশি তিনি দাবি জানিয়েছেন যে সমস্ত বুথগুলিতে মানুষদের ভোট দেওয়া হয়নি সেগুলি পুনরায় নির্বাচন করা হোক ।
অন্যদিকে বিজেপির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের কেতুগ্রাম ব্লক সভাপতি তরুন মুখোপাধ্যায় । তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপি প্রার্থী কয়েকটি গাড়িতে করে লোকজন নিয়ে এসেছিলেন । তাঁরা বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের কাছে আবেদন জানাতে থাকে । বিজেপি প্রার্থী নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করছেন দেখে আমাদের দলের লোকজন প্রতিবাদ করেন । কিন্তু কারোর কোনও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়নি ।’।