এইদিন ওয়েবডেস্ক,চিত্রকূট(মধ্যপ্রদেশ),১০ আগস্ট : মাত্র দু’মাস বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও ২২ টি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন,রচনা করেছে ৮০ টি গ্রন্থ । রামানন্দ সম্প্রদায়ের বর্তমান চার জগদ্গুরু রামানন্দাচার্যের অন্যতম জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্যজির জীবন কম অলৌকিক নয় । হিন্দু সাধু সমাজে রামভদ্রাচার্যজির নাম অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয় । ধর্মচক্রবর্তী, তুলসীপীঠের প্রতিষ্ঠাতা রামভদ্রাচার্যজিকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার । রামভদ্রাচার্যজি বেদ পুরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রামলালার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন রাম জন্মভূমি মামলার ।
শোনা যায়, শ্রী রাম জন্মভূমির পক্ষে মামলাকারী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিতি হয়েছিলেন রামভদ্রাচার্যজি । আদালতে তিনি ঋগ্বেদের জৈনীয় সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রী রামের জন্মস্থানের অবস্থান বর্ণনা করেন । সরায়ু নদীর উপর একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে দিক ও দূরত্বের সুনির্দিষ্ট বিবরণ দিয়েছিলেন আদালতে । বিচারপতির আদেশে জৈমিনীয়া সংহিতা আনানো হয়েছিল আদালতে । রামভদ্রাচার্যজির কথামত জৈমিনীয়া সংহিতার নির্দিষ্ট পাতায় তাঁর দাবির সত্যতা যাচাই করা হয় । হুবহু মিলে যায় রামভদ্রাচার্যজির কথা । তিনি শ্রী রাম জন্মভূমির অবস্থান যেখানে বলেছিলেন বিতর্কিত স্থানটি ঠিক সেই স্থানেই দেখা যায় । ঘুরে যায় রাম জন্মভূমি মামলার মোড় । এক ভারতীয় সন্ন্যাসীর এই প্রকার অলৌকিক ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকও ।
উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রামভদ্রাচার্যজি । পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল গিরধর মিশ্র । মাত্র দু’মাস বয়সে হারাতে হয় দৃষ্টিশক্তি । তিনি ব্রেইল লিপি পড়তে বা লিখতে বা ব্যবহার করতে পারে না । কেবল শুনে শুনেই কন্ঠস্থ করেছেন বিভিন্ন ধর্ম পুস্তক,শিখেছেন ২২ টি ভাষা । সংস্কৃত, হিন্দি, আওয়াধি, মৈথিলির মতো ২২ টি ভাষায় রচনা করেছেন ৮০ টি গ্রন্থ । তিনি বিশিষ্ট পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, স্রষ্টা, প্রচারক, দার্শনিক,হিন্দু ধর্মের নেতা, কবি ও লেখক । রামানন্দ সম্প্রদায়ের বর্তমান চার জগদ্গুরু রামানন্দাচার্যের একজন এবং ১৯৮৮ সাল থেকে এই পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন রামভদ্রাচার্যজি ।
রামভদ্রাচার্য হলেন জগদগুরু রামভদ্রাচার্য বিক্লাং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন চ্যান্সেলর । চিত্রকূটে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন ধর্মীয় ও সমাজসেবা-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তুলসী পীঠ । রামচরিত মানসের রচয়িতা তুলসীদাসের নামে নামকরণ করেছেন ওই সংস্থার । ২০১৫ সালে ভারত সরকার রামভদ্রাচার্যজীকে পদ্মবিভূষণ দিয়ে সম্মানিত করে । রামভদ্রাচার্যজী এমন একজন সন্ন্যাসী যিনি তার অক্ষমতাকে পরাজিত করে জগদগুরু হয়েছিলেন । বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের চিত্রকূটে বাস করেন মহান এই সনাতনি সাধক ।।