এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০৮ আগস্ট : ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কুর্দি তরুনী মাহসা আমিনিকে হিজাব না পরার অপরাধে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ পিটিয়ে মারার পর থেকে অনেক ইরানী মহিলা, তরুনী তাদের চুল খোলা রেখে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে । ইরানের বহু সেলিব্রেটি, ক্রীড়াবিদ এবং অভিনেত্রীরা যুক্ত হয়েছে এই আন্দোলনের সাথে । আন্দোলনকারীদের মৃত্যুদণ্ড, কারাগারে পাঠিয়ে নির্বিচারে গনধর্ষণ করিয়েও এই আন্দোলনে লাগাম টানতে পারেনি ইরানের কট্টর মৌলবাদী সরকার । এবারে হিজাব বিহীন মহিলা, তরুনী, কিশোরীদের পাগল বলে ঘোষণা করে পাগলখানায় পাঠাচ্ছে ইরানের ধর্মোন্মাদ আদালত । কিছু কিছু মহিলাদের সপ্তাহে একবার মানসিক চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সির গত ১৯ জুলাইয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,৬১ বর্ষীয়া ইরানী অভিনেত্রী আফসানেহ বায়েগানকে পাগল ঘোষণা করা হয় এবং ২ বছরের কারাদণ্ডের পরিবর্তে তাকে সপ্তাহে একবার মানসিক চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে বলা হয় । বায়েগানের অপরাধ ছিল যে তিনি সম্প্রতি হিজাব ছাড়াই একটি পাবলিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং ইনস্টাগ্রামে চুল খোলা রেখে ছবি পোস্ট করেছিলেন । তাঁর এই অবাধ্যতা মেনে নিতে পারেনি ইরানের আদালত ।
কিছুদিন আগে ইরানের আদালত অভিনেত্রী আজাদেহ সামাদিকে ‘অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’-এর জন্য চিকিৎসা করেছিল। হিজাবের বিরোধিতা করে তিনি টুপি পরে একজনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কবরস্থানে গিয়েছিলেন । তাঁকে একটি ‘মনস্তাত্ত্বিক কেন্দ্রে’ যেতে এবং থেরাপি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি সামাজিকভাবে নিজেকে ‘শুদ্ধ’ করতে পারেন ।
কয়েকদিন আগে, তেহরান প্রদেশের একটি আদালত একজন মহিলাকে হিজাব ছাড়া গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরার পর একটি মর্গে এক মাস মৃতদেহ পরিষ্কার করার জন্য সাজা দিয়েছিল ইরানের আদালত ৷
এদিকে নারীদের মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য করায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে । গত ২৩ শে জুলাই ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম- হোসেন মোহসেনি এজেই-এর কাছে পাঠানো একটি খোলা চিঠিতে, চারটি মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার সভাপতিরা কর্তৃপক্ষকে অন্যান্য উদ্দেশ্যে “মনস্তাত্ত্বিক শোষণ” করার অভিযোগ করেছেন ৷ তারা এহেন শাস্তির নিন্দা করে বলেছেন যে “মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি নির্ণয় করা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব, বিচারকদের নয় ।” তাদের উদ্বেগ আরও গুরুতর যে এমনকি ছোট বাচ্চাদেরও এই প্রকার শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে না । মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের শীর্ষে, শিক্ষামন্ত্রী ইউসেফ নুরি স্বীকার করেছেন যে স্কুলছাত্রদের রাস্তায় বা স্কুলে আটকে রাখা হয়েছিল এবং “চিকিৎসা মনস্তাত্ত্বিক কেন্দ্রে” রাখা হয়েছিল যেখানে তাদের “অসামাজিক” আচরণ প্রতিরোধ করতে “পুনরায় শিক্ষিত করা হয়েছিল” । এমনকি গত জুলাই মাসে অ্যামাজন(Amazon) ও ডিজিকাল (Digikala)-এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কারন ওই দুই কোম্পানির হেডকোয়ার্টারের মহিলা কর্মীরা হেডস্কার্ফ ছাড়াই ডিউটি করছিলেন বলে ।
প্যারিস সিটি ইউনিভার্সিটির ইরানি বিশেষজ্ঞ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আজাদেহ কিয়ান বলেছেন যে মানসিক চিকিৎসার এই অপব্যবহার হল “প্রথম এবং সর্বাগ্রে, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থার একটি প্রদর্শন”। হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর চাপ বাড়াতে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও,সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা তাদের মাথার স্কার্ফ পরিত্যাগ করছেন।
কিয়ান বলেছেন,জুলাইয়ের শেষে ইরানের পার্লামেন্টে পেশ করা একটি বিলে যেসব নারী মাথায় স্কার্ফ পরতে অস্বীকার করেন তাদের জন্য আরও কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইন পাস হলে নারীরা তাদের নাগরিক অধিকার, তাদের কাজের অধিকার হারাতে পারে। তারা সবকিছু থেকে বঞ্চিত হবে । কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, বিলটি একটি নতুন অপরাধের সূচনা করে যা আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে ।।