প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ আগস্ট : বিরোধীরা নয় । খোদ রোগীর পরিজনরাই সামনে আনলেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের দুরাবস্থার কথা । যা জেনে রীতিমত হতাশ পূর্ব বর্ধমানের গলসির বাসিন্দারা । এখানকার পুরষা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার ও নার্স থাকলেও শূন্য ওষুধের ভাঁড়ার।তাই গ্যাটের কড়ি খরচ করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে দিলে তবেই মিলছে চিকিৎসা।এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য রোগীর পরিজনরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে দায়ী করছেন জেনে বিরোধীরা খুশি হলেও ক্ষুব্ধ শাসক দল ।
গলসির পুরষা হাসপাতাল নিয়ে এতকাল গলসির
বাসিন্দাদের গর্বের অন্ত ছিল না । বাম আমলে
১৯৮২ সালে জাতীয় সড়ক সংলগ্ন জায়গায় এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা পায় । গলসি বিধানসভা
এলাকার বাসিন্দারা ছাড়াও দুর্গাপুর, আসানসোল
এমনকি প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মানুষজনও
এই হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেয়ে থাকেন।
১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে গলসি থেকে পানগড়ের মধ্যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে জখমদের চিকিৎসার
ভরসা এই পুরষা হাসপাতাল।কোভিড অতিমারির
সময় এই পুরষা হাসপাতাল থেকেই রোগীরা পেয়েছিলেন অভাবনীয় চিকিৎসা পরিষেবা । এমন এক হাসপাতালেই এখন শূন্য ওষেধের ভাঁড়ার। ।
বিনে পয়সায় চিকিৎসা পাওয়ার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি রোগীদের জন্য গ্যাটের কড়ি খরচ করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনেদিলে তবেই মিলছে চিকিৎসা !
পুরষা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার পৌছে দেখা গেল বাইরের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকছেন রোগীর পরিজনরা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনছেন কেন? হাসপাতাল থেকে কি ওষুধ দিচ্ছে না ? এই প্রশ্ন শুনে একের পর এক রোগীর পরিজন ক্ষোভ , হতাশা সবই যেন একসাথে উগরে দিলেন ।
হাসপাতাল চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে পুরষার বাসিন্দা আসগর আলী মল্লিক বলেন,“আমার পরিবারের অসুস্থ সদস্যকে পুরষা হাসপাতে ভর্তি করেছি। এই হাসপাতালেই রোগীর চিকিৎসা,ওষুধ সবই মিলবে জানতাম। কিন্তু এখনতো দেখছি এই হাসপাতাল আর গরিব মানুষজনের বিনে পয়সার চিকিৎসা পাওয়ার হাসপাতাল নেই।প্রায় সব ওষুধ,ইনজেকশন ও সেলাইন বাইরের দোকান থেকে কিনে এনে হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের দিতে হচ্ছে। তার পর মিলছে চিকিৎসা। এমনকি সামান্য ’র্যানট্যাক’ ইনজেকশন পর্যন্ত কিনে এনে দিতে হচ্ছে। ডাক্তার বাবুরা জানিয়ে দিচ্ছেন,কোন ওষুধেরই নাকি সাপ্লাই নেই।ওষুধ বাইরে থেকে কিনে এনে না দিলে রোগীর চিকিৎসা হবেনা। তাই আমার পরিবারের রোগী বিনে পয়সায় চিকিৎসা পাওয়ার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও ওই রোগীর জন্য ওষুধ কিনে এনে দিতে হচ্ছে বাইরের বেসরকারি ওষুধের দোকান থেকে। হাসপাতালের এমন দুর্দশা তৈরি হওয়ার জন্য আসগর মল্লিক রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকেই দায়ী করেছেন ।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা অপর আরো রোগীদের পরিজনরাও একই অভিযোগ করেন । রোগীর পরিজন সেখ ইনামুল হক,সুভাষ আঁকুড়ে ,হাদিয়া বিবি সেখ ও জাহানারা আনসারী বলেন,’জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধ ছাড়াও ডাইরিয়া চিকিৎসার সাধারণ সেলাইনও হাসপাতালে মিলছে না। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরথেকে প্রতিদিন পাঁচ সাতশো টাকার ওষুধ, ইনজেকশন ও সেলাইন কিনে আমাদের হাসপাতালে দিতে হচ্ছে । হাসপাতালের এই দুরাবস্থা কল্পনারও অতীত ।’ এমন অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামগঞ্জের গরিব মানুষরা সবথেকে বেশী বিপাকে পড়বেন বলে ওই চার রোগীর পরিজন মন্তব্য করেছেন ।
এদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক সায়ন জোয়াদ্দার।তিনি বলেন, হাসপাতালে ওষুধ মিলছে না বলে রোগী ও তাদের পরিজনরা রেগে গিয়ে আমাদের উপরেই চড়াও হচ্ছে । পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা হাসপাতালে রোগী ভর্তি করবো কি করে সেটা এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে। ওষুধ হাসপাতালে কেন নেই তার উত্তর আমদের কাছেও নেই।ওষুধের আকালের কারণে এখন রাতে কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলেও ভাবতে হচ্ছে বলে চিকিৎসক সায়ন জোয়াদ্দার মন্তব্য করেন । ওষুধের আকাল বিষয়ে পুরষা হাসপাতালের বি এম ও এইচ ডাঃ পায়েল বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’এই সমস্যার বিষয়টি আমি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি। আবারও জানাবো এবং দ্রত যাতে এই সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তারও আবেদন রাখবো ।’
এবিষয়ে জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,
‘পুরষা হাসপাতালের অবস্থাই প্রমাণ করে দিচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা বেহাল হয়ে পড়েছে।
শুধু পুরষা হাসপাতালই নয়,ওষুধের চাহিদা মত যোগান পৌছাচ্ছেনা বহু সরকারী হাসপাতালেই ।’
সরকারী হাসপাতালে ওষুধ, স্যালাইনের আকাল
আসলে দেউলিয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রকাশ বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান । যদিও বিজেপি নেতার
অবিযোগ নস্যাৎ করেত দিয়ে গলসির তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘরুই দাবি করেন,’পুরষা হাসপাতাল ভালভাবেই চলছে। ওষুধ,স্যালাইন
ইনজেকশনের ঘটতির বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামী মঙ্গলবার রোগীকল্যান সমিতির তরফে বৈঠক ডেকেছি।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে নিয়ে বসে বৈঠক আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষন করা হবে ।’।