এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৮ জুলাই : রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তু সঙ্কট কয়েক দশক ধরে উদ্ভূত হয়েছে । এদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, পরিবর্তে তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে । মিয়ানমার থেকে উৎখাত হওয়ার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে । ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঠিক কত সংখ্যক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করছে,তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সরকারি ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি । বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল এবং উত্তরপ্রদেশে প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে অনুমান ।
দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মীরা প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করলেও, কেউ কেউ রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তুদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ বলে মনে করছেন । অবশ্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ও তার দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই- ইত্তেহাদুল মুসলিমীন সহ ভারতীয় মুসলিম সংগঠনগুলি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে । এমনকি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এদের মধ্যে কাউকে সওয়াল পর্যন্ত করতে শোনা যায় । কিন্তু ভারত সরকার রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন । আর রোহিঙ্গাদের অতীত ইতিহাস ও ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সন্দেহজনক গতিবিধিতে প্রমাণিত যে সরকারের সেই উদ্বেগের মধ্যে কোনো ভুল নেই ।
কারন মিয়ানমারে থাকার সময় থেকেই বিভিন্ন ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল রোহিঙ্গারা । ১৯৭৪ সালে রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (RPF)-এর উত্থান হয় । এটি একটি চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী যা বিশ্বব্যাপী প্যান-ইসলামবাদী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং গভীরভাবে উগ্র মতাদর্শ দ্বারা চালিত । পরবর্তী সময়ে আরপিএফ বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয় । আরপিএফ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গা সংহতি সংস্থা (RSO) নামে পরিচিত একটা উগ্রপন্থী দল গঠন করা হয় । গঠিত হয় আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্ট (এআরআইএফ) নামে আরও একটি সন্ত্রাসী সংগঠন । আরএসও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জামায়াত-ই-ইসলামি (JeI), আফগানিস্তানে হিজব-ই-ইসলামি (HeI), ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের (J&K) হিজবুল মুজাহিদিনের মতো একাধিক কুখ্যাত মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী থেকে সমর্থন পেয়েছে ।
সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য ৮০-৯০ এর দশকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট ঘাঁটি তৈরি করে আরএসও । ওই ঘাঁটি থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা এসে ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে মিয়ানমারের দক্ষিণ মংডুর হ্লুট গ্রামের নাশকতা চালায় । সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বেশ কিছু নিরীহ নাগরিক আহত হয় । তখন তদন্তে আল-কায়েদার সাথে আরএস- এর যোগসূত্রও পাওয়া যায় ।
ভারতও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসবাদীদের হামলার সাক্ষী হয়েছে । ২০১৩ সালের ৭ জুলাই বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয়েছিল । ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সন্দেহভাজন মোহাম্মদ উমাইর সিদ্দিকী নিজেই গোয়েন্দাদের জেরায় কবুল করেছে একথা । জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমান বিস্ফোরণে খালিদ মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করেছিল । খালিদ হায়দ্রাবাদের একজন রোহিঙ্গা মুসলিম যিনি মিয়ানমারে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতেন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সদস্য ছিলেন । অর্থাৎ বর্ধমানের বিস্ফোরণেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ যোগ প্রমানিত ।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করার পাশাপাশি এই মৌলবাদী উপাদানগুলির ভারতের অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীগুলির সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং যোগাযোগ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে । যেকারণে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে । আর তার প্রত্যক্ষ প্রমান হল ২০১২ সালে আজাদ ময়দানে দাঙ্গার ঘটনা । রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত আজাদ ময়দানে বিক্ষোভ সমাবেশে ভারতীয় মুসলমানরা উত্তেজক বক্তৃতা দিয়ে সেই দাঙ্গা উসকে দিয়েছিল । সেই সময় মহিলা পুলিশদের শ্লীলতাহানি পর্যন্ত করা হয়েছিল এবং অমর জওয়ান স্মৃতি সৌধকে অপমান করা হয়েছিল ।
এই পরিস্থিতি ভারতীয় সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । তাসত্ত্বেও জাতিপ্রীতির কারনে ভারতীয় মুসলিমদের একাংশের মানুষ এবং ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর লোভে দেশের কিছু রাজনৈতিক দল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সমর্থনে তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে,যা দেশের নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল ।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দ্বারা সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ । বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তুদের জোরদার গ্রেফতারি অভিযান চলছে । এযাবৎ ৭৪ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অ্যান্টি-টেররিস্ট স্কোয়াড ।।