প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ এপ্রিল : ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনার মাঝেই ফের রহস্য মৃত্যু বিজেপি কর্মীর । নদিয়ার চাকদহের পর এবার এক বিজেপি কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হল পূর্ব বর্ধমানের কালনার কল্যানপুরে।মৃত ব্যক্তির নাম অখিল প্রামাণিক(৪৫)। সোমবার সকালে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় বাড়ির অদূরে বাগানের গাছে তার ঝুলন্ত দেহ মেলে । ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । খবর পেয়ে কালনা থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশ কে বাধার মুখে পড়তে হয়।
মৃতর পরিবার পরিজন ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করেন তৃণমূলের লোকজন অখিল প্রামাণিককে প্রাণে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেই কারণেই অখিলের পা মাটিতে ঠেকে রয়েছে ও সেখানে মাটিতেই পড়ে রয়েছে কয়েক ফোটা রক্ত। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে বিক্ষোভে শুরু করে বিজেপি কর্মীরা। ভাঙচুর করা হয় এলাকার তৃণমূলের পার্টি অফিসও । যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে কালনার তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন, মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করতেই ওই ব্যক্তিকে বিজেপি কর্মী বলা শুরু হয়েছে ।
পঞ্চম দফায় শনিবার মিটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রথম পর্বের ভোট ।তার পর থেকেই রাজ্যের অন্যান অংশের পাশাপাশি শহর বর্ধমান সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলেছে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা। রবিবার সকালে নদিয়ার চাকদহের শিমুরলিয়া গ্রামে দীলিপ কীর্তনিয়া নামে এক বিজেপি কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ওই বিজেপি কর্মীকে তৃণমূলের লোকজন পিটিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ তুলে স্বোচ্চার হয় বিজেপি শিবির । এই ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে কালনায় বিজেপি কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে চরমে উঠলো রাজনৈতিক উত্তেজনা ।
মৃত অখিল প্রামাণিকের ভাই দেবু প্রামাণিক
অভিযোগে বলেন , ‘তাঁরা বিজেপি পার্টি করেন বলে কয়েকমাস ধরেই তাঁকে ও তাঁর দাদাকে
হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল কর্মীরা। ওরাই অখিল কে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে দেবু প্রামাণিক দাবি করেন ”।
মৃতর পরিবারের অপর সদস্যদের কথায় জানা গিয়েছে ,অখিল রবিবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন । তার পর থেকে আর বাড়ি ফেরেন নি । সেই কারণে এদিন সকাল হতেই স্ত্রী ও ভাই অখিলের খোঁজে বের হন । তখনই তারা নিজেদের বাড়ি অদূরের বাগানে অখিলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান । ঘটনার কথা জানার পরেই কালনা বিধানসভা আশনে প্রতিদ্বন্দী বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ঘটনাস্থলে পৌছান । দলের কর্মীর মৃত্যুর জন্য তিনি তৃণমূলকেই দায়ী করেন ।
বিশ্বজিৎ বাবু বলেন , ‘তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে । পরাজয় নিশ্চিত বুঝে গিয়ে এখন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে তৃণমূল খুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। মৃত কর্মীর পরিবারের দায়িত্ব দল নেবে“ । এলাকার বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডে বলেন, “আমাদের দলের কর্মী অখিল কে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সিবিআই তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চাই।”
কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের যদিও দাবি করেন বিজেপি এখন মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে । ওই ব্যক্তি বিজেপির কর্মী কিনা তা কেউ জানেন না । সভা ও মিছিলেও তাকে কেউ কোনদিন দেখে নি । সমর্থক হতে পারেন । খোঁজ নিয়ে জেনেছি উনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে উনি আত্মঘাত্যার পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন। মৃত ব্যক্তির দহের ময়নাতদন্ত হোক । তাহলেই পরিস্কার হয়ে ওনার মৃত্যুর কারণ খুন নাকি আত্মহত্যা। সেই সব ছেড়ে বিজেপির লোকজন হামলা ভাঙচুর চালিয়ে এলাকার তৃণমূলের পার্টি অফিস তছনছ করে দিল । বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতির জবাব ভোটের রেজাল্ট বের হলেই পয়ে যাবে বিজেপি ।’।