দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জুলাই : সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার কুরুম্বা গ্রামের বধূ বীথিকা গড়াই (৪৮)কে রাস্তা থেকে হাত,পা ও মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ভাসুরপো আশুতোষ গড়াই, আশুতোষের ছেলে পূর্নচন্দ্র গড়াই । তারপর তারা বীথিকাদেবীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় । এই নৃশংস ঘটনায় সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে আশুতোষের স্ত্রী রীনা গড়াইয়ের বিরুদ্ধেও । এদিকে টানা তিনদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন বীথিকাদেবী । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানতে হল তাঁকে । আজ মঙ্গলবার ভোরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ গ্রামে ফিরতেই কান্নার রোল ওঠে । এমনিতেই ঘটনার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছেন মৃতার পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসীরা । মৃতার স্বামী নবকুমার গড়াই ঘাতক ভাইপো ও ভাইপোর ছেলের ফাঁসির দাবি করেছে । এদিন তিনি বলেন,’এর আগেও কয়েকবার আমার স্ত্রীকে হুমকি দেখিয়েছিল আশুতোষ । কিন্তু ওরা যে এই রকম নির্মমভাবে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলবে তা কখনো কল্পনাও করিনি । আমার পরিবারটাকে ওরা শেষ করে দিল । আমি ওদের ফাঁসি চাই ।’ এদিকে বধূর মৃত্যুর তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ (খুন) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে ।
মঙ্গলকোট থানার কুরুম্বা গ্রামের বাসিন্দা নবকুমার গড়াই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন । বাড়িতে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বীথিকাদেবী । বাড়ির সমস্ত কিছু দেখভাল তাঁকেই করতে হত । অন্যদিকে নবকুমার বাবুর বাড়ির সামনেই তাঁর ভাইপো আশুতোষ গড়াইয়ের বাড়ি । নবকুমারবাবুর বাড়ির পিছন দিকে রয়েছে একটি পুকুর । ওই পুকুরপাড়ের কিছুটা জায়গা নিয়েই আশুতোষের সঙ্গে বছর তিনেক ধরে বিবাদ চলছিল । এনিয়ে আদালতে মামলাও হয় । তাসত্ত্বেও ঝামেলা মেটেনি ।
ঝামেলার জেরে বীথিকাদেবীদের বাড়ির পিছনের অংশ প্লাস্টারের কাজ বাকি ছিল । সম্প্রতি তিনি প্লাস্টারের কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । সেকথা কোনো রকমভাবে আশুতোষের কানে চলে যায় । আর তখনই সে নিজের কাকিমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে বলে অভিযোগ । সেই মত গত শনিবার বীথিকাদেবী প্রাতঃভ্রমণে বের হলে তাঁকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় আশুতোষ গড়াই ও তার ছেলে । তারপরেই তারা মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়ে দেয় । মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে বীথিকাদেবী জানিয়ে গেছেন যে আশুতোষ ও পূর্নচন্দ্র মিলে বাড়ির সামনে কলতলা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মুখ,হাত,পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । সেই সময় তার ভাসুরপোর স্ত্রী রীনা গড়াইও তাদের সহযোগিতা করে ।
জানা গেছে,এই ঘটনায় বীথিকাদেবীর খুড়তুতো দাদা সুবীর গড়াই আশুতোষ, তার ছেলে পূর্নচন্দ্র এবং স্ত্রী রীনা গড়াইয়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলকোট থানায় এফআইআর দায়ের করেন । অভিযোগের ভিত্তিতে আশুতোষ ও পূর্নচন্দ্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ । বর্তমানে ধৃত বাবা ও ছেলে জেল হেফাজতে । তবে ঘটনার পর থেকেই গাঢাকা দিয়েছেন তৃতীয় অভিযুক্ত রীনা গড়াই । পুলিশ তাকে খুঁজছে । পুলিশ ধৃতদের নিজেদেএ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাবে বলে জানা গেছে । এদিন কুরুম্বা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় আশুতোষ গড়ায়ের বাড়িতে তালা ঝুলছে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,আশুতোষের মেয়ে ও জামাই মাঝে মাঝে এসে গৃহপালিত পশুগুলির দেখভাল করে যাচ্ছেন ।।