এইদিন ওয়েবডেস্ক,বরেলি,২৩ জুলাই : রোগী দেখার নাম করে ডেকে এক মহিলা এমবিবিএস চিকিৎসককে ফাঁদে ফেলেছিল উত্তরপ্রদেশের বরেলির (Bareilly) একটি মধুচক্র । বছর ২২-এর ওই চিকিৎসক নির্দিষ্ট ঠিকানায় যেতেই তাকে জোর করে নগ্ন করা হয় । চিকিৎসকের নগ্ন ভিডিও নিজেদের মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করে রাখে ওই দলটি । তারপর শুরু হয় ব্লাকমেলিং । ব্লাকমেলিংয়ে অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন ওই চিকিৎসক । এই ঘটনায় চক্রের মক্ষীরানিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ধৃতের নাম হিমানি । তার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বিশৌলি থানা এলাকায় । চিকিৎসকের কাছে সে নিজেকে প্রিয়া গাঙ্গওয়ার বলে পরিচয় দিয়েছিল । এই ঘটনায় ওই চক্রের আরও এক মহিলা ও দুই পুরুষ পলাতক রয়েছে । পুলিশ তাদের খুঁজছে ।
জানা গেছে,মৃত চিকিৎসকের বরেলির সুভাষনগর থানা এলাকার একটি কলোনিতে একটি ক্লিনিক চালাতেন । ঘটনাটি ২০২২ সালের । ওই বছর ১০ অক্টোবর যখন ক্লিনিকে রোগী দেখছিলেন সেই সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে । ফোনকারী হলেন এক মহিলা । ওই মহিলা নিজেকে প্রিয়া বলে পরিচয় জানায়, সে বিএসসি নার্সিং করার পর কাজ খুঁজছে । তাই সে চিকিৎসককে একটা কাজ ঠিক করে দেওয়ার আবেদন জানায় । কিন্তু চিকিৎসক ব্যস্ত থাকায় তিনি ফোন কেটে দেন । একই দিন সন্ধ্যায় প্রিয়া তার এক বন্ধুকে নিয়ে চিকিৎসকের ক্লিনিকে পৌঁছায় । সে চিকিৎসককে একটা কাজ জুটিয়ে দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করে । চিকিৎসক তাকে চলে যেতে বলে । এরপর ওই বছর ২০ অক্টোবর চিকিৎসককে ফের ফোন করে প্রিয়া । সে জানায় তার মা খুব অসুস্থ, ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই, যেকোনো সময় তার মা মারা যেতে পারে । সেই কারনে চিকিৎসককে বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখার জন্য অনুরোধ জানায় প্রিয়া । চিকিৎসক প্রথমে যেতে রাজি হননি । কিন্তু প্রিয়া কান্নাকাটি শুরু করে দিলে ওই মহিলা চিকিৎসক রোগী দেখতে যেতে রাজি হয়ে যান ।
ধৃত হিমানি ওরফে প্রিয়া পুলিশকে বলেছে যে ‘আমি ডাক্তারকে আমার বন্ধুর বাড়িতে বরেলির কর্ম নগরে ডেকেছিলাম। ডাক্তার এলে আমি তাকে আমার রুমে নিয়ে যাই। আমি রুমে পৌঁছানোর সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করি । ডাক্তার ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই আমার এক বন্ধু এবং দুই যুবকও এসে তাকে আটকে দেয় । এরপর আমরা ডাক্তারের নগ্ন করে ভিডিও করি । সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ডাক্তারের এটিএম পাসওয়ার্ড নিয়ে নিই।। তিন দফায় ৫০ হাজার টাকা এটিএম থেকে তুলেও নিই । পরে আরও এক লাখ টাকা দিতে বলি চিকিৎসককে । তিনি টাকা দিতে রাজি না হলে নগ্ন ভিডিও ক্লিপিং দেখিয়ে ডাক্তারকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করি ।’
জানা গেছে,এরপর বাধ্য হয়ে বেরেলির এসএসপির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই চিকিৎসক । এসএসপির নির্দেশে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রিয়া গাঙ্গওয়ারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বেরিলির সুভাষনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় । তারপরেও ওই মধুচক্রের ব্লাকমেলিং বন্ধ হয়নি । শেষে অতিষ্ট হয়ে ওই চিকিৎসক গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন । পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পরিবারের লোকজন কোনো পুলিশি ব্যবস্থা ছাড়াই চিকিৎসকের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন । শেষে এসএসপি প্রভাকর চৌধুরীর নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার হিমানিকে গ্রেফতার করেছে বরেলি পুলিশ । পাশাপাশি ধৃতের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে ।।