এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাঞ্জাব(পাকিস্তান),২২ জুলাই : ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে জিহাদি হামলার আশঙ্কায় পালাচ্ছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা শহরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ । জানা গেছে,নবী মুহাম্মদ এবং তার স্ত্রী আয়েশাকে নিয়ে অবমাননা করে কিছু লেখা একটি কাগজের টুকরো জনৈক এক মুসলিম ব্যক্তি রাস্তায় খুঁজে পাওয়ার পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । ওই লেখায় গত মাসে সুইডেনে কোরান পোড়ানোর প্রশংসা করা হয়েছে । তার জেরে গত ১৭ জুলাই পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা শহরের ফয়সালাবাদ রাস্তার মোড়ে এনিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ধর্মোন্মাদদের দল । মুসলিম জনতা ধর্মনিন্দার অভিযোগে খ্রিস্টানদের আক্রমণ করার হুমকি দিয়েছে । বিক্ষোভকারীরা দোষীকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ অজ্ঞাত অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের জন্য স্থানীয় আলেমদের একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে । সেই সঙ্গে ধর্মোন্মাদ জিহাদিদের শান্ত করতে এক ডজন সন্দেহভাজন খ্রিস্টানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা শহরে ৪,০০০ এরও বেশি খ্রিস্টান বাস করে । ক্যাথলিক আইনজীবী সানওয়ার বালম বলেছেন,’রবিবার ভোরে স্থানীয় মসজিদগুলি থেকে ঘোষণা করেছে যে তারা ধর্মনিন্দার অভিযোগে মরিয়ম টাউন ও আশেপাশে এলাকায় হামলা চালাবে । এই ঘোষণার পর পুলিশ আশেপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে এবং ক্যাম্প করে । কিন্তু প্রায় অর্ধেক খ্রিস্টান হামলার ভয়ে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে ।’ তিনি বলেন,’এক ডজন খ্রিস্টানকে গ্রেফতার করা হয়েছে । আমরা আশা করি যে গ্রেপ্তারের ফলে বিক্ষোভকারীদের শান্ত হবে এবং অবশেষে নির্দোষরা হামলার হাত থেকে মুক্তি পাবে ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিগত দুই মাসে সারগোধা শহরে এটি তৃতীয় ব্লাসফেমির অভিযোগের ঘটনা । এটি অশান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র ।’
জানা গেছে,সারগোধা শহরের বাসিন্দা জাকি মসিহ নামে এক খ্রিস্টান যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলেছিল এক মুসলিম ব্যক্তি । অভিযোগের পর ওই খ্রিস্টানকে গত ৮ জুলাই গ্রেফতার করে পুলিশ । এর আগে ৩০ জুন সারগোধা জেলার চক ৪৯ শুমালি গ্রামে হারুন শাহজাদ নামে এক খ্রিস্টান যুবকের ফেসবুকে একটি পোস্ট ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ।
প্রসঙ্গত,ব্লাসফেমি পাকিস্তানে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। অভিযোগের ফলে খ্রিস্টান বসতিগুলিতে, বিশেষ করে পাঞ্জাব প্রদেশে একাধিকবার উন্মত্ত মুসলিম জনতার হামলার ঘটনা ঘটেছে খ্রিস্টান ও হিন্দুদের উপর । লাহোর-ভিত্তিক সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস তার বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,২০২২ সালে ১৭১ টি, ২০২১ সালে ৮৪ টি,২০২০ সালে ২০৮ টি,২০১৯ সালে ৩৬ টি এবং ২০১৮ সালে ৬১ 6টি ব্লাসফেমির ঘটনা ঘটেছে । প্রতিবেদন অনুযায়ী,১৯৮৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২,১২০ জনকে ব্লাসফেমি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল । তার মধ্যে পাঞ্জাব প্রদেশেই ৭৫ শতাংশ ঘটনা রয়েছে । ২০১৭ সালের পাকিস্তানের আদমশুমারি অনুসারে পাকিস্তানে ১৬ লাখ খ্রিস্টান ছিল, যা মোট জনসংখ্যার ১.২৭ শতাংশ ।।