এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,২১ জুলাই : ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ফের জিহাব বিহীন নারী ও মেয়েরা উপর নজরদারির জন্য নৈতিকতা পুলিশকে সক্রিয় করতেই ইরানি মেয়েদের উপর অমানবিক দমনপীড়ন শুরু হয়েছে । তেহরানের বাসিন্দা লীলা জিয়াফার ( Leila Ziafar) নামে এক তরুনীকে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে পাচার করে দিয়েছে । জিয়াফরকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রেফতারের একটি ভিডিও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের বিরোধিতা করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাদ যাচ্ছেন না সেলিব্রিটিরাও । গ্রেফতার হয়েছেন ইরানি অভিনেত্রী আফসানেহ বায়গানও (Afsaneh Baygan) । বাধ্যতামূলক হেডস্কার্ফ ছাড়া জনসমক্ষে হাজির হওয়ার কারণে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই বছরের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । গ্রেফতারকৃত শিল্পীদের পরিস্থিতি অনুসরণ করার কমিটির (Committee to Follow up the Situation of Arrested) সদস্য মেহেদি কোহিয়ান ( Mehdi Kohian) বলেছেন যে বায়গানকে সাপ্তাহিক সাইকোথেরাপি সেশনে যোগ দিতে হয় । গত ১২ জুলাই আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বেগান বাধ্যতামূলক হিজাবের পরিবর্তে, একটি টুপি সহ উপস্থিতি হয়েছিলেন । এই অপরাধে পরে আদালতের নোটিশ পাওয়ার পরে “অভিনয়ের অসম্মানজনক ক্ষেত্র” থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন আফসানেহ বায়গান । বায়গান বলেছিলেন যে তিনি নিজেকে “ক্ষুব্ধ সমাজ”-এর অংশ হিসাবে বর্ণনা করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন এবং তার বাকি জীবন “শান্তি”তে কাটানোর আশা প্রকাশ করেছিলেন ।’ মেহেদি কোহিয়ান আরও জানান,আর এক অভিনেত্রী, হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি, এর আগে একই কারণে অভিনয় থেকে অবসর নিয়েছিলেন ।
প্রসঙ্গত,ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের আদর্শ ও আইনের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করার জন্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক অভিনেত্রী সহ প্রচুর সংখ্যক নারী হিজাব ছাড়াই জনসমক্ষে উপস্থিত হয়েছেন ।
ফৌজদারি আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা প্রদান করে অনেক প্রতিবাদী মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের দ্বারা তলব করা হয়েছে এবং বিচার করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের উপর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কঠোর পোষাক কোড প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে শত শত ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।
গ্রেফতার হওয়া অভিনেত্রীদের তালিকায় রয়েছেন, তারানেহ আলিদুস্তি(Taraneh Alidoosti),কাতায়ুন রিয়াহি(Katayoun Riahi) এবং হেঙ্গামেহ গাজিয়ানি ( Hengameh Ghaziani)সহ একাধিক জন । তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে চুল ঢেকে না রাখার কারনে গ্রেফতার করা হয় । লীলা বলুকাত (Leila Bolukat) কে একই ধরনের অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড এবং দুই বছরের জন্য অভিনয় থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজাদেহ সামাদি ( Azadeh Samadi) নামে একজন অভিনেত্রীকে টুপি পরে জনসমক্ষে হাজির হওয়ার অপরাধে “অসামাজিক ব্যক্তিত্বের ব্যাধি”র চিকিৎসা করার জন্য দ্বি-সাপ্তাহিক সাইকোথেরাপি সেশনে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
ইরানের মানবাধিকার কেন্দ্র (CHRI) এক বিবৃতিতে বলেছে জাতিসংঘ এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্পষ্টভাবে এই দমনমূলক, বিপজ্জনক এবং বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করার আহ্বান জানানো উচিত । সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরান (CHRI) এর নির্বাহী পরিচালক হাদি ঘাইমি বলেছেন,’গত নয় মাস ধরে, ইরানি কর্তৃপক্ষ অগণিত মেয়ে ও নারীকে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জোরপূর্বক হিজাব আইনকে অমান্য করতে দেখেছে । প্রতিক্রিয়ায়, তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে পদদলিত করে ইরানি মহিলাদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি প্রয়োগের তাদের ব্যর্থ কৌশল পুনরায় শুরু করছে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ইরানের নারী ও মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং মৌলিক মানবাধিকারের জন্য কঠোরভাবে ওকালতি করা উচিত ।’।