এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৬ এপ্রিল : মহিলাদের উপর অত্যাচারের ক্রাইম রেকর্ড দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে এমনই অভিযোগ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ (জেপি) নাড্ডা । তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করে বলেন, ‘আমরা শুনেছি মমতা দিদি মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন । কিন্তু বিগত দশ বছরে দেখেছি,না মায়ের চিন্তা করেছেন উনি । না মাটি ও মানুষ রক্ষা পেয়েছে । এমনকি বাংলায় মহিলাদের উপর যত অত্যাচার হচ্ছে সেই সমস্ত ঘটনার ক্রাইম রেকর্ড দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা । আজ মহিলাদের উপর অত্যাচার, ধর্ষনের ঘটনা,অ্যাসিড অ্যাটাক,ঘরোয়া অত্যাচারের ঘটনা সব থেকে বেশি হয় এই বাংলায় ।’
সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর মায়ের চিন্তা তো কখনও উনি করেননি । শোভা মজুমদার নামে এক বিজেপি কর্মীর মা তাঁর ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিলেন । কিন্তু আজ পর্যন্ত এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে একটা শব্দও খরচ করেননি মমতাজী। রাজ্যের মহিলাদের কে দেখেও দেখেন না বাংলার দিদি ।’
এরপর তিনি বলেন, ‘যদি মাটির কথা বলা হয় তাহলে যেভাবে বাংলার উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল সেভাবে উন্নয়নই হয়নি । বর্ধমান জেলার পরিচিতি ধান ও আলু চাষের জন্য । অথচ এখানে কোনও কোল্ড স্টোরেজ নেই । কৃষকদের ফসল রাখার কোনও ব্যাবস্থাই নেই । সেচের ব্যাবস্থা নেই । কৃষকদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে সেচের ব্যাবস্থা করতে হয় । তার উপর মিডিল ম্যানেরা মাঝ থেকে কৃষকদের শোষন করছে । অথচ কেউ দেখার নেই । আর এই সুযোগে মধ্যস্বত্ত্বভোগীর ভূমিকা পালন করছে তৃণমূলের কার্যকর্তারা ।’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষ অত্যাচারিত । আজ ক্রাইম রেকর্ডে দেশের মধ্যে শীর্ষে বাংলা ।
জেপি নাড্ডা বলেন, ‘রাজ্যের ৭৬ লক্ষ কৃষক প্রধানমন্ত্রী কৃষান সম্মান নিধি প্রকল্পের বার্ষিক ৬ হাজার টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান নেওয়া ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু কিন্তু মমতা দিদির জন্য ওই টাকা এরাজ্যের কৃষকরা পাননি । আগামী মে মাসের ২ তারিখের পর বিজেপি ক্ষমতায় এসে বিগত ৩ বছরের ১৮ হাজার টাকা ও চলতি বছরের জন্য অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা কৃষকদের দিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি । সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রাজ্যের ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ গরীব মানুষ আয়ূষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন । রাজ্যে আসল পরিবর্তন হলে প্রথম ক্যাবিনেটেই স্বাস্থ্যবিমা দিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি এদিন ঘোষনা করেন ।
এদিন ফের নাম না করে আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল খাঁর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল কংগ্রেসকে দলিত,রাজবংশী,নমশুদ্র ও মতুয়া বিরোধী বলে কটাক্ষ করে জেপি নাড্ডা বলেন, “ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ পর্যন্ত দলীয় নেত্রীকে র্ভ্যৎসনা করেননি মমতা দিদি । এমনকি তৃণমূলের সযযোগী দলগুলিও এনিয়ে মুখ খোলেনি । ওরা সব হাঁতির দাঁত । দেখানোর জন্য আলাদা,খাওয়ার জন্য আলাদা । একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি সবকা সাথ-সবকা বিকাশ-সবকা বিশ্বাস নিয়ে চলে ।’
এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অভিযোগ করেন, রাজ্যে তোলাবাজি,বালিচুরি চলছে । করোনার সময় শষ্য চুরি করেছিল তৃণমূল নেতারা । আমফানের কেন্দ্রীয় অনুদানও চুরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন তিনি । এরপর তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ,’তোলাবাজি , তোষণ,একনায়কতন্ত্র,বালি ও কয়লা সিন্ডিকেট, ভ্রষ্টাচার থেকে মুক্তি পেতে বিজেপিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন ।’
এদিন উন্নয়নের ঢালাই প্রতিশ্রুতি দেন জেপি নাড্ডা । তিনি বলেন, ‘রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কৃষকের উন্নতি হবে । কোল্ডস্টোরেজ, ওয়ার হাউস, সড়ক পথ নির্মান হবে ।’ এরপর জনসভায় আগত মানুষদের বাংলা নববর্ষের শুভ কামনা জানিয়ে জেপি নাড্ডা বলেন, ‘এবারের নববর্ষ শুধু একটা নতুন বছরই নয় । এই নববর্ষে বাংলায় আসল পরিবর্তন হবে । ‘সোনার বাংলা’য় পরিবর্তন হবে এই বাংলা ।’
এদিন কেতুগ্রাম ব্লকের পাঁচুন্দি গ্রামের খেলার মাঠে একটি জনসভার আয়োজন করেছিল বিজেপি । কেতুগ্রামের বিজেপি প্রার্থী মথুরা ঘোষের সমর্থনে আয়োজিত ওই সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা । তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ,ভরতপুরের বিজেপি প্রার্থী ইমন কল্যাণ মুখোপাধ্যায়,বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ প্রমুখ । কয়েক হাজার মানুষ এদিনের জনসভায় যোগ দেন ।।