ভোরের পাখির ডাক শুনে ঘুমটা ভাঙল। একরাশ স্বস্তির পরশ নিয়ে দিনমণি আজ উদয় হয়েছে। অনেকদিন পর মনটা ভালো লাগছে তিয়াসার। অংশু বরাবরই দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন একজন ব্যক্তি। যদিও দু’জনে একই স্রোতে প্রবাহিত হতে গিয়েও একদিন জীবন-নদী দু’দিকে বিভক্ত হয়ে গেছে। তবুও দুই তীর থেকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা এবং আস্থা এখনও একটুও ম্লান হয়ে যায়নি। বরং যে যার মত স্বাধীনভাবে ভালো আছে। তবে আজকাল বয়সের ভারে মনটাও মাঝে মাঝে ভারী হয়ে ওঠে। এক অদ্ভুত শূন্যতা এসে গ্রাস করে নিজের অজান্তে। স্মৃতির খাতা খুলে জীবনের প্রতিটি পর্বের হিসেবনিকেষ করে একাকী, নির্জনতাকে সঙ্গী করে। বিছানা থেকে উঠে বসতেই বেডরুমের দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ কানে এল।
— টিয়া! দরজা খোল, কখন থেকে ডাকছি যে।
— হ্যাঁ, যাচ্ছি।
এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলতেই দেখল হিমাংশু
চায়ের ট্রে হাতে ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। হাসিমুখেই বলল,
— good morning! ভেতরে আসব ম্যাডাম?
— আরে তুমি কেন চা করতে গেলে অংশু?!
— কী হ’ল তাতে? রোজ তো নিজে করে নিজে খাও। আজ নাহয় আমিই করে দিলাম!
— এভাবে অভ্যেস খারাপ করে দিও না।
সাইডে রাখা ছোট রাউন্ড টেবিলটায় ট্রেটা রাখতে রাখতে হিমাংশু বলল,
— একদিনে অভ্যেস খারাপ হবে না। আমি তো রোজ থাকব না!
এই কথায় কোন উত্তর না দিয়ে তিয়াসা বলল,
— আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। তুমি বস।
তিয়াসা বেডরুম থেকে বেরিয়ে গেল।
হিমাংশুর শেষের কথায় চোখটা যেন ছলছল করে উঠল। সেটা লুকোনোর চেষ্টায় দ্রুত গিয়ে বাথরুমে ঢুকল।
বেসিনের কল খুলে দিতেই
অব্যক্ত কান্না বেরিয়ে এল,মিশে গেল বেসিনের জলের শব্দের সঙ্গে।
হু হু করে কেঁদে উঠল তিয়াসা। বুঝতে পারে না এই কান্না এল কেন? সেই তো একদিন চেয়েছিল এই সেপারেশন। তার কোন সিদ্ধান্তকেই কখনও তো হিমাংশু অমর্যাদা করেনি! তবে তার জীবনে দ্বিতীয় নারীকে সহ্য করার মত এত বড় একটা মন তখন তৈরি হয়নি। যখন ওদের সম্পর্কের কথা জেনেছিল, তখন থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। না, জোর করে এই বিবাহিত সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চায়নি তিয়াসা। (ক্রমশঃ)