ছেলেটি জানতনা গনতন্ত্র কি …
বিশ্বাস করুণ একদিনের জন্যেও হাতে ঝান্ডা তোলেনি সে
কখনো ফুটপাতে মিছিলে হাঁটেনি, নেতাদের ভাষণ শোনেনি, ও জানত-না রাজনীতি কি।
এমনকি রাস্তার মোড়ে জুয়ার ঠেক, চোলাইয়ের দোকান সেখানেও কখনো যায়নি সে।
গ্ৰামের দাঙ্গায় ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করলে একা মাঠে নজরুল পড়ত,
ওর পদাবলী ভালো লাগে, রবির গান গায়, জীবনানন্দ পড়ে।
পড়াশোনার ফাকে খিদে পেটে আকাশের দিকে তাকিয়ে কত-কি স্বপ্ন আঁকত মনে মনে !
মাঠে ধান রোয়ার সময় যখন সূর্য মধ্য গগনে …
গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘামে শরীর ক্লান্ত হয়ে আসে,
তখন সেই তৃষ্ণার্ত দেহে এক অজানা শক্তির সঞ্চার করে তার এক চিলতে আশা !
কাঁচা ঘর পাকা হবে, শহরে চাকরি হবে, আর অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ।
সে জানতো রামধনুর সাতটা রঙ, খুঁজে বেড়াত জঙ্গলা বনের ধারে অযত্নে পরে থাকা নানা ফুল !
দিন শেষে চেনা হাতের স্পর্শ, মলিন আঁচলের গন্ধ, সন্ধ্যার তুলসী মঞ্চ তাকে ঘরে ডেকে আনত ঠিক সময়ে।
সূর্য ডুবতেই আষাঢ়ের ঝির ঝির বৃষ্টি নিয়ে আজও ফিরে এসেছিল সে …
তবু এখনো কেউ দ্বীপ দেখায়নি উঠনে !
সারা পৃথিবীর অন্ধকারে ভারি হয়ে আছে তাদের ছোট্ট ঘরখানা, কোথাও এতটুকু আলো নেই ,
দোরগোড়ায় পড়ে আছে প্রাণহীন রক্ত মাখা একটা নিথর দেহ !
পাশে মা অচৈতন্য, এই তো তার একমাত্র আলো … যা নিবে গেল কয়েক ঘন্টা আগে।
এরপর গনতন্ত্রের গণনার খাতা থেকে কেটে দেওয়া হবে নাম,
বাদ হবে রেশন কার্ড, এক এক করে মুছে যাবে সব চিহ্ন, মাঠ-ঘাট নদীর পাড় সবাই ভুলে যাবে তাকে !
শুধু ওই মায়ের বুকে একটা নেভা সলতের জ্বালা গুমরে কাঁদবে …
যেখানে পোড়া বারুদের গন্ধ।
সেই মাটির দাওয়া থেকে আরও দূরে একদল উলুখাগড়া তখনো ছুটছে ওরা ছুটছে !
যারা আজও বোঝেনি স্বাধীনতা কি গনতন্ত্র কাকে বলে।
এই ছেলেটিও শেখেনি সেই নীতি ও শুধু জানতো এক থালা ভাত ভাগ করে খেতে।