এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০৪ জুলাই : নতুন এক তালিবানি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন আফগান মহিলারা । এবারে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত সেলুনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবানের জনবিষয়ক ও নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রক । তালিবান নেতা মোল্লা হেবাতুল্লা আখুন্দজাদেহের মৌখিক আদেশ অনুসারে,দেশে মহিলাদের চুলের সেলুনগুলি পরিচালনা করার আর অনুমতি দেওয়া হবে না ।এভাবে সারাদেশে হাজার হাজার হেয়ার সেলুনের লাইসেন্স বাতিল করা হবে । তবে তালিবানের মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার কোনো কারন ব্যাখ্যা করেনি । এদিকে এই সিদ্ধান্তে দেশবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে । বেশ কয়েকজন মহিলা হেয়ারড্রেসার বলছেন যে এই ধরনের একটি আদেশ মহিলাদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়িয়ে তুলবে এবং তালিবানদের তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত ।নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন যে আফগান নারীদের হেয়ারড্রেসিং সেলুন নিষিদ্ধ করা তালিবানদের নারীবিরোধী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা,যাতে তারা এইভাবে নারীদের জীবনযাত্রাকে আগের চেয়ে আরও “সংকীর্ণ” করে তুলতে পারে । তারা এই কাজটিকে আফগানিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে “নিপীড়ন” বলে অভিহিত করেন এবং তালেবানদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিশ্বের উদাসীনতার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।
আফগান নারীদের কাজ, শিক্ষা এবং দর্শনীয় স্থানে ঘোরার অধিকারের উপর বিধিনিষেধ কার্যকর করার পর, তালিবানের জনবিষয়ক ও নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রণালয় একটি চিঠিতে মহিলাদের চুলের সেলুন পরিচালনা নিষিদ্ধ করেছে । রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তালিবানের ওই নির্দেশিকাটি পোস্ট করা হয়েছিল । তাতে কাবুল শহর দেশের বিভিন্ন প্রদেশে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত সেলুন বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি চলতি বছর থেকেই ওই সমস্ত সেলুনগুলির লাইসেন্স ও চুক্তিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে । নিষেধাজ্ঞাটি তালিবানের জনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পেশাগত বিষয় এবং নীতির উপমন্ত্রী মোহাম্মদ ফকির মোহাম্মদীর স্বাক্ষর রয়েছে । নিষেধাজ্ঞার একটা কপি আফগান নাপিত ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে ।
পারওয়ানের চারিকরে হেয়ারড্রেসিং সেলুন চালানো ইয়ালদা আজিজি (ছদ্মনাম) বলেন,’যখন আমি মহিলাদের হেয়ারড্রেসিং সেলুনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার খবর শুনলাম, আমার দু’চোখে অন্ধকার নেমে এল । কারণ আমরা ১৫ জন পরিবারের সদস্য এবং এই হেয়ারড্রেসিং সেলুন থেকে আমাদের জীবন চলছিল ।, কিন্তু এখন আমরা কী করব? আমার পাঁচজন কর্মী আছে যারা প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০,০০০ উপার্জন করে এবং তারাও বেকার হয়ে যাবে ।’
কাবুলের হেয়ারড্রেসার নাসরিন বলেন,’তালিবানদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত; কারণ তাদের এই কর্মকাণ্ডের অর্থ পরিবারের মুখ থেকে রুটি কেড়ে নেওয়া । তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর আমাদের ব্যবসা ভালো চলত না ঠিকই তবে অন্তত এটি আমাদের জীবনযাত্রার খরচ জোগাতো ।’
এদিকে, বেশ কিছু নারী অধিকার কর্মী নারীদের চুলের সেলুন নিষিদ্ধ করাকে তালিবানের অশ্লীল আচরণের ধারাবাহিকতা বলে মনে করেন । নারী অধিকার কর্মী মনসেহ মুবারেজ তালিবানের এই পদক্ষেপকে আফগানিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে “নিপীড়ন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি তালেবানদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য মনে করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য চাপ দেওয়া । মুবারেজ বলেছেন,’মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা হাসিল করতে কৌশল গত ভাবে আফগান মহিলাদের উপর বিধিনিষেধ এবং চাপ আরোপ করার উপর মনোনিবেশ করেছে তালিবান । অথচ বিশ্বের দেশগুলো তালেবানদের “নারী-বিরোধী” কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে উদাসীন। একটি মহিলার কাছ থেকে এক টুকরো রুটি এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন কেড়ে নিয়ে তাকে কাবুলের রাস্তায় ভিক্ষা করানোটা খুবই দুঃখজনক। ইসলামে কর্মজীবী নারীকে হারাম মনে করা হলেও ভিক্ষা করা নারীদের জন্য হালাল বলে বিবেচিত হয়। মহিলাদের চুলের সেলুন বন্ধ করা, যা আফগানিস্তানের মহিলাদের ব্যক্তিগত আয়ের একমাত্র উৎস ছিল, আফগানিস্তানের জনগণের উপর একটি স্পষ্ট নিপীড়ন, যা দেখেও বিশ্ব উপেক্ষা করে এবং উদাসীনভাবে থাকে ।’।