এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১২ এপ্রিল : গ্রাম থেকে কলসি,বালতি,প্লাস্টিকের বিভিন্ন জার সঙ্গে নিয়ে মাঠের মধ্যে হেঁটে আসছেন একদল গৃহবধু । গন্তব্য দামোদর নদী । দীর্ঘ পথ হেঁটে আসার পর দামোদর নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিলেন মহিলার দল । তারপর সোজা নেমে গেলেন জলশুন্য দামোদর নদীতে । নদীর একেবারে মাঝখানে ছোট্ট একটি খালের কাছে গিয়ে থমকে গেলেন তাঁরা । তারপর সেই খাল থেকে ছোট পাত্র করে জল তুলে একে একে নিজের নিজের পাত্রে জল ভরতে শুরু করলেন মহিলারা । পানীয় জল সংগ্রহ করার জন্য এটাই এখন রোজ নামচা হয়ে গেছে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া ব্লকের জপমালি গ্রামের বাসিন্দাদের । গ্রামবাসীদের অভিযোগ ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু তাঁদের পানীয় জলের কোনও ব্যাবস্থাই হয় না । এনিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা । ভোটের মরশুমে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে শাসকদলকে ।
মেজিয়া ব্লকের জপমালি গ্রামে প্রায়প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের বসবাস । গ্রামবাসীসের অধিকাংশ জনমজুরি করেন । গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁদের গ্রামে পানীয় জলের আকাল চলছে । গ্রামে বেশ কয়েকটি টিউবওয়েল রয়েছে ৷ তবে সেই জল পান করা তো দুরের কথা রান্নারও অযোগ্য । কারন জলে প্রচুর পরিমানে আয়রন আছে । তাই টিউবওয়েলের জল কেবল শৌচকর্ম ও গৃহস্থালির অনান্য কাজে লাগে । তাই পানীয় জলের জন্য তাঁদের নির্ভর করতে হয় দামোদরের উপর । যখন নদীতে জল থাকে না তখন তাঁদের নদীর ‘সরা ডবা’ বা ‘চুয়ো খালের’ জলের উপরেই নির্ভর করতে হয় ।
জানা গেছে, টিউবওয়েলের জল আয়রনমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে প্রতি টিউবওয়েলে একটি করে মেশিন লাগানো হয়েছিল । কিন্তু রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেই মেশিনগুলি অকেজো হয়ে পড়ে আছে । এছাড়া গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য সজলধারা প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু কোনও এক অজানা কারনে সেই কাজও বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে পানীয় জলের জন্য পার্স্ববর্তী দামোদরের উপরেই নির্ভর করতে হয় গ্রামবাসীদের ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বর্ষায় বিশেষ অসুবিধা না হলেও খড়ার সময় পানীয় জলের জন্য বিপাকে পড়তে হয় গ্রামবাসীদের । তখন জলশুন্য নদীর মাঝখানে ৪-৫ ফুটের একটি করে গর্ত করা হয় । যাকে স্থানীয়রা ‘সরা ডবা’ বা ‘চুয়ো খাল’ বলেন । জল চুইয়ে চুইয়ে খালে জমা হয় বলেই এই নামকরন বলে জানা গেছে । খড়ার সময় ওই চুয়ো খালই গ্রামবাসীদের পানীয় জলের চাহিদা মেটায় ।
তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত বানজোরা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মৃণাল কান্তি ঘোষ গ্রামবাসীদের এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন । তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নল বাহিত বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ হবে ওই গ্রামে ।
এদিকে রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব । স্থানীয় বিজেপি নেতা মিঠুন পান্ডে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন দশ বছরে রাজ্যে একশ শতাংশ উন্নয়ন করে দিয়েছেন । কিন্তু তাঁর এই দাবি যে কতটা অন্তঃসারশুন্য তা জপমালি গ্রামের বাসিন্দারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন । তৃণমূলের ভাঁওতাবাজির জবাব মানুষ ঠিক দিয়ে দেবেন ।’।