এইদিন ওয়েবডেস্ক,ওয়াশিংটন,২২ জুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবারের মার্কিন সফর এক অর্থে ঐতিহাসিক । কারন যে টার্বোফ্যান ইঞ্জিন তৈরি করতে সফল হতে পারেনি ডিআরডিও, এবার সেই প্রযুক্তি ভারতকে দিতে চলেছে আমেরিকা । চলতি মাসের শুরুতে, এই প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল । এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল এবং তার মার্কিন প্রতিপক্ষ জেক সুলিভানের মধ্যে বৈঠকে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চলতি মার্কিন সফরে এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে চলেছে । আমেরিকার কাছ থেকে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি পেতে চলেছে ভারত । অনুমান করা হচ্ছে যে ‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীনে ভারতে এফ ৪১৪ ( F414) ইঞ্জিন তৈরি নিয়ে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) এবং মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (GE)-এর মধ্যে চুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতিতে ঘোষণা হতে পারে । এই ইঞ্জিনগুলি ভারতের হালকা যুদ্ধ বিমান তেজস এমকে-২ তে ব্যবহার করা হবে । বর্তমানে এই প্রযুক্তি বিশ্বের মাত্র ৪ টি দেশের হাতে আছে । ওই দেশগুলি হল-আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্স । তবে এতদিন কোনো দেশই জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে চায়নি ।
টার্বোফ্যান ইঞ্জিনটি জেনারেল ইলেকট্রিকের সামরিক বিমানের ইঞ্জিনের অংশ। এটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন নৌবাহিনী ব্যবহার করে আসছে। জেনারেল ইলেকট্রিক অ্যারোস্পেস এযাবৎ ১,৬০০ টি এফ ৪১৪ ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে । যা বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কাজে এসেছে । ভারত ক্রায়োজেনিক রকেট ইঞ্জিনের মতো প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তির তালিকার বাইরে রয়েছে । ডিআরডিওর গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাব্লিশমেন্ট (জিটিআরই) প্রথমবারের মতো হালকা যুদ্ধ বিমানের জন্য জিটিএক্স-৩৭ ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করে । পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘কাবেরী ইঞ্জিন প্রকল্প’ শুরু হয় । এই প্রকল্পের অধীনে ৯ টি প্রোটোটাইপ ইঞ্জিন এবং ৪ টি কোর ইঞ্জিন প্রস্তুত করা হয়েছিল । প্রায় ৩২১৭ ঘন্টা পরীক্ষাও করা হয়েছিল, কিন্তু এই ইঞ্জিনগুলি যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত পাওয়া যায়নি । এখন ডিআরডিওর এই ইঞ্জিনগুলি ড্রোনে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র সরকার ।
উল্লেখ্য,মার্কিন টার্বোফ্যান ইঞ্জিনগুলিতে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি । এটির মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ অথরিটি ডিজিটাল ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল (FADEC) সিস্টেম এবং কুলিং ম্যাটেরিয়াল সিস্টেম । পাশাপাশি অত্যাধুনিক বিমানের ইগনিশন সিস্টেম এবং ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও রয়েছে এই ইঞ্জিনে । এই ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা ডিজিটালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এখন এই ইঞ্জিন হাতে এলে যুদ্ধ বিমান তৈরির ক্ষেত্রে ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে । জানা যাচ্ছে যে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) এবং অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে তেজস মার্ক-২ ফাইটার জেট তৈরি করবে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জিই-৪১৪ চালিত তেজস মার্ক-২ প্রোটোটাইপ ইঞ্জিন প্রস্তুত হয়ে যাবে ৷ জিই-৪১৪ ইঞ্জিন ইউএস কংগ্রেসের অনুমোদনের পরে ১০০ শতাংশ ট্রান্সফার অফ টেকনোলজি (TOT) এর অধীনে ভারতে তৈরি করা হবে । শুধুমাত্র তেজস মার্ক-২ নয়, টুইন-ইঞ্জিন অ্যাডভান্সড মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA-I) এবং টুইন-ইঞ্জিন ডেক-বেসড ফাইটার জেটও (TEDBF) তৈরি হবে ভারতে ।।