প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ জুন : পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দী তৃণমূলের প্রাথীদের নাম দল ঠিক করবে । প্রার্থী নিয়ে কারুর সুপারিশ মানা হবে না। নবজোয়ার কর্মসূচীকে সামনো রেখে জেলায় জেলায় ঘুরে এই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর পূর্ব বর্ধমানের মেমারি-১ ব্লকে দলের প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। ওই সব প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার সাথে সাথে অনেকে আবার নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা করে দেয়।দলের হঁশিয়ারি সত্ত্বেও নির্দলরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় এখন রায়নার মতই নির্দল কাঁটাতেই বিদ্ধ হয়ে আছে মেমারির তৃণমূল শিবির । আর তা নিয়ে বেছায় উৎফুল্ল বিরোধী শিবির ।
একদা বামেদের দুর্গো হিসাবেই পরিচিত ছিল মেমারি।তৃণমূল কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই মেমারিতেও চরমে পৌছেছিল সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত । সেই সংঘাতের জেরে প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে থাকতো মেমারির নাম । রাজ্য রাজনীতিতে পালবদলের পর ধীরে ধীরে মেমারিতে দাপট বাড়তে শুরে করে ঘাস ফুলের।একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের হাতছাড়া হয়ে তৃণমূলের দখলে চলে যায় । কিন্তু মেমারিতে ঘাস ফুলের দাপট বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের যার প্রভাব অব্যাহত থাকলো মেমারিতে ।
মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, মেমারি-১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মোট আসন ২১২ টি । আর সমিতিতে আসন সংখ্যা ৩০ টি । এই সবকটি আসনে দলের ঘোষিত প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ।দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেকে নির্দল অর্থাথ গোঁজ প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেদেয় । দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নির্দলদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ জারি করলেও তা অনেকে অগ্রাহ্য করে। আর মনোনয়ন প্রত্যাহার ও ’বি’ ফর্ম ফিলাম করে প্রতীক পাবার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পর সব ওলটপালট ঘটে যায় ।
মধুসূদন বাবু জানিয়েছেন,দলের প্রাথীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করার দিনের মধ্যে নির্দলরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে না। তার কারণে ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ২১২ আসনের মধ্যে ৮০ টি আসন এবং সমিতির ৩০ টি আসনের মধ্যে ৭ আসনে নির্দল প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী হিসাবো রয়েই যায় । এমনটা হওয়া কাম্য ছিলনা বলো বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য মন্তব্য করেছেন ।
আর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এর দাবি,প্রতীক প্রদানে বিলম্ব হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে নির্দলদের নিয়ে কোন সমস্যা হবে না । নির্দলরা কেউ ভোটের প্রচারেও নামে নি । তারা তৃণমূল প্রার্থীর হয়েই প্রচার চালাচ্ছে। নির্দল প্রার্থরাই ভোটারদের জানিয়ে দিচ্ছে ,তাঁদের নয়। ভোট তৃণমূল প্রার্থীকে দেওয়ার কথায় তারা বলছে । মেমারি-২ ব্লকে আবার আরও বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে বলে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন,’তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিল এমন অনেকে কংগ্রেসের প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন ।’
তৃণমূলের এই কোন্দলের বিষয়টি জানার পর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’যেমন দল তেমন তার প্রার্থী তালিকা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকেদের তৃণমূলে কোন স্থান নেই।তোলাবাজরাই
তৃণমূলের সম্পদ। ওই দলের নির্দেশ নিচুতলার কেউ যে মান না সেটা নানা সময়ে দেখা গেছে । এবারের পঞ্চায়েত ভোটে সেটা রায়না ও মেমারিতে
আরো একবার দেখা গেল।তোলাবাজরা তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে। শেষ অবধি নির্দল হয়েই তারা রয়ে গিয়েছে। যদি কোন ভাবে ভোটে জিতে যায় তাহলে তৃণমূলে ভিড়ে গিয়ে মধু
খাবে এই আশা নিয়েই নির্দলরা বুক বেঁধে আছে ।’ আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলী বলেন,’তৃণমূল কংগ্রেস দলে সবই সম্ভব। ওই দলে বখরাই প্রথম ও শেষ কথা ।’
এদিকে এদিন জেলা নির্বাচন কমিশনের দেওয়া
তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে,পূর্ব বর্ধমান জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে বিজেপি ৮১টি, সিপিএম ১৯২টি, কংগ্রেস ৫৬ টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে।আর পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিজেপি ১৩ টি, সিপিএম ৩০টি এবং কংগ্রেস ১৪ টি আসনে মনোনয়ন তুলে নিয়েছে। তৃণমূল তুলেছে ৩২ টি আসনে ।
ভোট হবে না এমন আসনের সংখ্যাও জেলায় কম নয় । কমিশনের তথ্য অনুযায়ীয়,জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০১০টি আসনের মধ্যে ৮৫৮টি আসনে কোনও ভোট হচ্ছে না। তার মধ্যে রায়না-১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে সিপিএম তিনটে আসন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জিতে গিয়েছে। বাকি গুলিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জিতে গেছে । গ্রাম পঞ্চায়েতে মঙ্গলকোটের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে ১৬২টি, কেতুগ্রাম-১ ব্লকে ১৫৩ টি আসনের মধ্যে ১৪৭ টি, বর্ধমান-১ ব্লকে ১৮৮টির মধ্যে ১০১টি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে।আর পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬৪০টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে ।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের আগেই জেলার ৩৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যত তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে।তার মধ্যে রয়েছে, মঙ্গলকোটে ১০ টি, কেতুগ্রাম-১ এর ৮ টি, বর্ধমান-১ ব্লকে ৫ টি, মন্তেশ্বর ব্লকে ৩ টি এবং আউশগ্রাম-১, জামালপুর, ভাতার, রায়না ১, গলসি ২, কালনা ১ ও খণ্ডঘোষ ব্লকে ১ টি। বাকি কাটোয়া-২ ও কালনা-২ ব্লকের প্রতিটি আসনেই ভোট হচ্ছে ।।