প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ জুন : হামলা হলে পাল্টা প্রতিরোধ হবে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা পরেই এই হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। এটা যে নিছক কথার কথা ছিল না তার প্রমান সোমবার মিলল পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে। মনোনয়ন দাখিলে তৃণমূলের কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করতেই এদিন রণ মূর্তি ধারণ করে সিপিএমের কর্মীরা ও সমর্থকরা । তখনই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ঘ বেঁধে যায় । তাতে বামেদের প্রার্থী ও প্রস্তাবক সহ বেশ কয়েকজন জখম হন। দুই পুলিশ কর্মীও ইটের আঘাতে জখম হন।এর পর পাল্টা প্রতিরোধে নেমে সিপিএম কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করে এলাকা ছাড়া করে বাইকে ভাঙচুর চালায়।খবর পেয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহরায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে
তৃণমূল কর্মীদের হঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ততক্ষণে মনোনয়ন দাখিলের সময় সীমা শেষ লগ্নে পৌছে যাওয়ায় বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া হয় না।এই সবের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএম নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মঙ্গলবার আরো শক্তিশালী সংগঠন নিয়ে তাঁরা মনোনয়ন দাখিল করতে আসাবেন।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা পারদ চড়তে শুরু করে। পূর্ব বর্ধমান জেলাতে ও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রথম দুটো দিন জেলার কাটোয়া , কেতুগ্রাম ও রায়নায় বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটলোও তেমন কোন বড়সড় অশান্তির ঘটনা ঘটেনি । যা এদিন ঘটলো বর্ধমান দুই ব্লকের বড়শুলে।যদিও জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন,কোথাও কোন আশান্তি হয়েছে এমন খবর তাঁর কাছে নেই । তিনি দাবি করেন,কমিশনের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণ ভাবেই সর্বত্র মনোনয়ন দাখিল হচ্ছে ।
বড়শুনের বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে, এদিন বেলা ১১টার অনেক আগে থেকেই তৃণমূল কর্মীরা বড়শুল মোড়ে একটি গ্যারেজের সামনে জড়ো হয়ে থাকতে শুরু করে।১১টা ১৫-২০ মিনিট নাগাদ কয়েকটি ছোট গাড়ি এবং একটি বাসে চড়ে বাম কর্মী ও সমর্থকরা বড়শুলে বর্ধমান ২ ব্লকের বিডিও অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় হই হুল্লোড় করে রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে একটি ট্র্যাক্টর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম প্রার্থী ও কর্মীদের বিডিও অফিস যাওয়া আটকে দেয় তৃণমূল কর্মীরা । বিডিও অফিস যেতে বাধা পেয়ে মোটা ডান্ডায় লাগানো দলীয় ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে সিপিএম কর্মীরা বাস থেকে নামতে শুরু করলে তৃণমূল কর্মীরা তাদের ঢ়ক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া শুরু করে। সেই আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সিপিএম কর্মীরা প্রথমে পিছু হাঠে। পরে পাল্টা প্রতিরোধে নেমে তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করে সিপিএম কর্মীরা। ওই সময়ে দু’পক্ষ একে অপরের দিকে ইট পাথর ছুঁড়ে মারা শুরু করে ।
এইভাবে বেশ কিছুক্ষঢ চলার পর পুলিশ দু’পক্ষকে থামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরিস্থিতি সান্ত থাকার পর সিপিএম কর্মীরা হঠাৎ করেই তৃণমূল কর্মীদের উপর চড়াও হয়। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তৃণমূল কর্মীরা গ্যারেজের সামনে থেকে পালাতেই সিপিএম কর্মীরা তাঁদের হাতে থাকা ডান্ডা দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের বাইকে বাপক ভাঙচুর চালানো শুরু করে দেয়। পুলিশ সেখানে পৌছে বাম কর্মীদের বাইকে ভাঙচুর চালানো থেকে বিরত করে।
এইভাবে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি চলতে চলতে বেলা ২ টা বেজে যায় । জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহরায় ওই সময়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে লাঠি উঁচিয়ে তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন। কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ কর্মীরা। এইসব করে পুলিশ যখন এলাকা সান্ত করে ততক্ষনে মনোনয়নয় জমা দেওয়ার সময়সীমা অন্তিম লগ্নে পৌছে যায় । অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিপিএমের প্রার্থী ও কর্মীদের তখন বলেন,’আজ আর আপনাদের মনোনয়ন দাখিল করা হবে না । আপনারা বাড়ি ফিরে যান। মঙ্গলবার মনোনয়নয় দাখিল করতে আসবেন“। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের এই দাবি প্রথমে মানতে চান না সিপিএমের প্রার্থী ও কর্মীরা । এদিনই মনোনয়ন দাখিল করবে বলে তাঁরা জেদ ধরে । তা নিয়ে টানাপোড়েধ চলতে চলতে ৩ টে বেজে গেলে সিপিএমের প্রার্থী ও কর্মীরা মত বদল করে ঘটনাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাডে পালসিট মোড়ে কিছুক্ষুণের জন্য পথ অবরোধ করে।
সিপিআইএম জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন,
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন,’তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণে আমাদের এক প্রার্থী রামপ্রসাদ রক্ষিত, এবং তার প্রস্তাবক প্রশান্ত মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মী জখম হয়েছে। পুলিশ ও তৃণমূল যৌথভাবে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করতে যেতে বাধা দিয়েছে। মঙ্গলবার আর সংগবদ্ধ ভাবে আমাদের প্রার্থীথের সঙ্গে নিয়ে কর্মীরা মনোনয়ন দাখিল করতে যাবে। মঙ্গলবাও যদি তৃণমূল কর্মীরা বাধা দেও ও হামলা চালায় তাহলে প্রত্যাঘাতও চরম হয়ে । এরজন্য যদি বড় কোন অঘটন ঘটে তার দায় পুলিশকেই নিতে হবে ।’
পাল্টা জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,এদিনের ঘটনা প্রমান করে দিল সিপিএম এখনও সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করতে পারে নি। সন্ত্রাস করেও ওরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই এদিন তৃণমূল কর্মীদের বাইকে যথেচ্ছ ভাবে ভাঙচুর চালিয়েছে সিপিএম কর্মীরা।তৃণমূল কর্মীরা পাল্টা মারধোরের পথে গেলে সিপিএম কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যেত না। তৃণমূল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাই সেই পথে পা বাড়ায়নি ।।