এইদিন ওয়েবডেস্ক,আবুজা(নাইজেরিয়া),০৫ জুন : নাইজেরিয়ার নাসারাওয়া রাজ্যের দুটি প্রধান খ্রিস্টান গ্রামে হামলা চালিয়ে গির্জার এক যাজক ও তার স্ত্রীসহ ৪৩ জনকে হত্যা করেছে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা । মর্নিং স্টার নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে,ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ মে । ওইদিন রাতে কারু কাউন্টির তাকালাফিয়া গ্রামের ইভানজেলিকাল চার্চ উইনিং অল (ইসিডব্লিউএ) এর যাজক রেভারেন্ড ড্যানিয়েল ডানবেকি এবং তার স্ত্রী নিজের বাড়ির একটা ঘরে ঘুমচ্ছিলেন । সেই সময় ইসলামি ফুলানি পশুপালক ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হামলা চালায় । পরের দিন ভোর রাত্রি পর্যন্ত চলে নরসংহার । হামলায় বেঁচে যাওয়া ইসিডব্লিউএ ডিস্ট্রিক্ট চার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড দানলাদি এনডোহ বলেছেন, আশেপাশের গোয়াঞ্জায়ও হামলা হয়েছে । তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন,’ড্যানিয়েল ড্যানবেকি এবং তার স্ত্রী সহ ৪৩ জনকে গুলি করে মারা হয় । পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদের বহু ঘরবাড়ি।’
তাকালাফিয়ার বাসিন্দা লিভিনাস ডান্ডাউরা জানান, ওইদিন রাত ৯ টার দিকে পশুপালকরা হামলা চালায় । নিহতদের বেশিরভাগই নারী, শিশু এবং বয়স্ক মামুষ । সশস্ত্র মুসলিম সন্ত্রাসীদের দল এবং পশুপালকরা গ্রামে অতর্কিত হামলার সময় যাকে দেখেছিল তাকেই এলোপাথাড়ি গুলি করে মেরেছিল । নিহতদের বেশিরভাগই পালাতে পারেনি । আহতদের কেফির একটি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র ফেডারেল মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা চলছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা লিভিনাস ডান্ডাউরা,আইজ্যাক ডাবুরা মর্নিং স্টার নিউজকে পাঠানো মেসেজে বলেছেন,’আমরা বেদনার সাথে এটি লিখছি যে আমাদের যে সমস্ত লোকেরা তাকালাফিয়ায় ফুলানি পশুপালক এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল তাদের দেখতে পর্যন্ত যায়নি কোন সরকারী কর্মকর্তা । তাদের চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য কেউ নেই ।হাসপাতালে আহতদের মধ্যে চারজন যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন । খ্রিস্টান ভুক্তভোগীরা এখন ঈশ্বরের ভরসায় রয়েছেন ।’
এদিকে হাসপাতালের একজন মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে চিকিৎসার বিল মেটাতে না পারায় আর কারোর চিকিৎসা করা সম্ভব নয় । ডাবু বলেছেন,’দুঃখজনক বাস্তবতা হল যে নাসারাওয়া রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা আক্রমণ সম্পর্কে কিছু বলেননি, বা নাসারাওয়া রাজ্যে এবং কাছাকাছি আবুজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাস্তুচ্যুত খ্রিস্টানদের কোনো সহায়তা প্রদান করেননি ।’
তিনি বলেন,’টাকালাফিয়ার হামলায় নিহতদের মধ্যে সাতজন তার আত্মীয়। আমার দাদা গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর মধ্যে পড়ে আছে। প্রশ্ন হল, তাকালাফিয়া এবং গোয়াঞ্জা সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানরা কী পাপ করেছে? আমরা খ্রিস্টান হওয়ার কারণেই কি আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে, এবং মুসলিম নিয়ন্ত্রিত রাজ্য ও ফেডারেল সরকার আমাদের রক্ষা করতে চায় না ?’
নাইজেরিয়ার একটি নিউজ আউটলেট জানিয়েছে যে কৃষকের জমিতে তার গবাদি পশু চরাতে থাকা একজন পশুপালকের মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছিল । কৃষক জমিতে গবাদি পশু চরাতে আপত্তি করলে, পশুপালক তার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় । কৃষক আত্মরক্ষায় জন্য পালটা হামলা চালালে ওই পশুপালকের মৃত্যু হয় । এরপর দুই গ্রামে নরসংহার চালায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা ।।