প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ জুন : নেশা আশক্ত ছেলে যাতে নেশা আশক্তি থেকে মুক্তি পায় তাই বাবা মা তাকে পাঠিয়ে ছিলেন নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসে । কিন্তু সেখানে নেশা মুক্ত হওয়ার শুশ্রুষা বা কাউন্সেলিং পাওয়া তো দূরের কথা উল্টে ভয়ানক অত্যাচারের শিকার হয় ইব্রাহিম শেখ নামে এক যুবক । ব্যাপক মারধর করে ওই যুবকের দু’পায়ের গোড়ালির অংশের হাড় ভেঙে দেবার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে । ছেলের উপর হওয়া এমন অমানুষিক নির্যাতনের বিহিত চেয়ে বাবা মনিরুল শেখ বৃহস্পতিবার রাতে মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । আর পুলিশ সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করতেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তারা ।
যুবক ইব্রাহিম শেখের বাড়ি মেমারি পৌসভার খাঁড়ো এলাকায় । যুবকের বাবা মনিরুল শেখ জানিয়েছেন,তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে । তাই নেশা মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি গত ২৪ এপ্রিল তাঁর ছেলে ইব্রাহিমকে মেমারির সুভাষ নগর এলাকায় থাকা নেশামুক্তি কেন্দ্রাবাসে ভর্তি করেন । ওই কেন্দ্রের দাবি মত টাকা পয়সাও মিটিয়েে দেন। নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসে সঠিক খাওয়া দাওয়া ,শুশ্রুষা ও কাউন্সেলিং পেয়ে ছেলে পুরোপুরি নেশা মুক্ত হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশাই তাঁর ছিল। কিন্তু সেখানে সুস্থ হয়ে ওঠাতো দূরের কথা,উল্টে তাঁর ছেলে ভয়ানক অত্যাচারের শিকার হয়ে এখন হাঁটা চলার শক্তি হারিয়েছে বলে মনিরুল শেখ জানিয়েছেন।
পুলিশকে মনিরুল শেখ জানিয়েছেন,তার ছেলে কেমন আছে, কতটা সুস্থ হল তা জানতে তিনি বুধবার ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসে যান । সেখানে ছেলে ইব্রাহিম তাঁর কাছে এসে কাঁদতে শুরু করে । কাঁদার কি কারণ তা তিনি ছেলের কাছে জানতে চান। তখন ছেলে ইব্রাহিম তাঁকে জানায়,নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসে তাকে ঠিকমত খেতে দেওয়া হয় না। নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসের লোকজন তার উপর অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় । গরম লোহার খুন্তি দিয়ে তাকে মারধোর করা হয়েছে। এমনকি প্ল্যাসটিক পাইপ দিয়ে দু’পায়ে মেরে পা মারাত্মক ভাবে জখম করে দেওয়া হয়েছে । তার জন্য হাঁটতে পারছো না । এমনকি শরীরের অন্যান জায়গায় মারধরের আঘাতের কালশিটে দাগও ছেলে ইব্রাহিম তাঁকে দেখায় ।
এমনটা অত্যাচারের কথা শোনার পর ওই দিনই নেশামুক্তি কেন্দ্রাবাস থেকে ছেলেকে বের করে নিয়ে মনিরুল সোজা চলে যান মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে । মনিরুল বলেন,:মেমারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবু ইব্রাহিমকে দেখার পর তার পায়ের এক্সরে করার কথা বলেন। পায়ের এক্সরে করানো হলে তা দেখে ডাক্তারবাবু জানিয়ে দেন‘ প্রচণ্ড আঘাতের কারণে ইব্রাহিমের দুটি পায়ের গোড়ালির হাড় ফেটে গেছে। তার চিকিৎসার জন্য মেমারি হাসপাতালের ডাক্তার বাবু ইব্রাহিমকে বর্ধমান হাসপাতালে রেফার করে দেনব। মনিরুল শেখ জানিয়েছেন, দু’পায়ে প্লাস্টার করে দিয়ে বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর ছেলে ইব্রাসিম কে বিশ্রামে থাকার পরামর্ম দিয়েছেন।
ছেলের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে মেমারি থানায় গিয়ে মনিরুল শেখ ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসের দুই কর্মকর্তা অভিজিৎ চৌধুয়ী ও বুম্বা সাহার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান । মনিরুল বাবুর দাবি,অভিজিৎ মেমারি শহরের কৃষ্ণবাজার এলাকার বাসিন্দা। আর বুম্বার বাড়ি শহর বর্ধমানের রথতলা এলাকায় । ইব্রাহিম কে নেশা মুক্তি কেন্দ্রা বাসে যে সব ওষূধ খাওয়ানো হয়েছে সেগুলি আদৌ চিকিৎসা সন্মত কি না, সেই বিষয়টিও মনিরুল সেখ পুলিশকে জানিয়েছেন । এই সবের পাশাপাশি মেমারির নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসে একই রকম শারীরিক ও মনসিক অত্যাচারের শিকার হওয়া আরো দুই যুবকের কথাও মনিরুল তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন। নেশা মুক্তি কেন্দ্রাবাসের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ইব্রাহিমের পরিবার ।
মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য এমন অত্যঅচারের কথা শুনে স্তম্বিত হয়ে যান । তিনি বলেন,’অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। এইসব বর্দাস্ত করা যায় না। পুলিশকে বলবো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ।’ এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,ঘটনা বিষয়ে অভিযোগ দায়ের হয়ে থাকলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে ।।

