শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২৭ মে : মূলত কৃষিজীবি এলাকা । কোনো প্রকার খনির নামগন্ধ নেই । অথচ বিগত দু’দিন ধরে একের পর এক ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে । ধ্বসের কারনে কোথাও ৮ ফুট,কোথাও ২০ ফুট,কোনোটি আবার তার চেয়ে গভীর গর্ত হয়ে যাচ্ছে । আচমকা এই ভূমিধ্বসের কারন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না গ্রামবাসীরা । ফলে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার মুকশিমপাড়া অঞ্চলের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিক সেখের বারো কাঠা বাস্তু জমির দু জায়গায় ধ্বস নামে ।পরে রাতের দিকে ওই জমির আরো দু জায়গায় ভুমি ধ্বসে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয় । পাশাপাশি জয়কৃষ্ণপুর গ্রামেরই একটি ঢালাই রাস্তার পাশে সামসুর আলম নামে এক গ্রামবাসীর একটি পরিত্যক্ত কৃষিজমির দু’জায়গায় ধ্বস নামে ।পার্শ্ববর্তী নজাই মন্ডলের কৃষিজমিতেও একই রকম ভাবে জমির মাটি ধ্বসে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয় । নেমেছে। আজ শনিবার সকালে একের পর এক ভূমিধ্বসের কথা চাওড় হতেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । কোথায় কখন ধ্বস নামে এই আশঙ্কায় কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গেছে জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দাদের ।
স্থানীয় গ্রামবাসী আনারুল ইসলাম শেখ, জিগর আলি শেখরা বলেন,’আমাদের এত বয়স হল এমন ভূমিধ্বস কখনো দেখিনি । কেন এমন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । কখন কি হয় কে জানে । খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি আমরা ।’
জানা গেছে,বিগত দু’দিন ধরে পূর্বস্থলীর জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের ৮ জায়গায় মাটি ধ্বসে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে । গ্রামের শিশু ও গবাদি পশুদের ওই সমস্ত গর্তের আশপাশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ কিন্তু আচমকা ওই গ্রামে কেন এত ধ্বসের সৃষ্টি হচ্ছে ? রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট ভুবিজ্ঞানী প্রনয় মন্ডল এই ঘটনার জন্য কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে অত্যধিক পরিমানে মাটি থেকে জল তুলে নেওয়াকেই দায়ি করেছেন । তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের এই অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায় না । এটা ভূমিরূপের একটা ঘটনা । মূলত ৩ টি বিষয়ের জন্য এই ঘটনা ঘটছে । ওই তিনটির মধ্যে প্রথম হল মৃত্তিকার গঠন । এলাকার অধিকাংশ পলি মাটি দ্বারা গঠিত এবং বালির পরিমান বেশি । ফলে অত্যধিক পরিমানে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ায় ভূমির নিচে বালির স্তর বসে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে । দ্বিতীয়ত,কোনো এলাকার মাটি সাধারনত গাছ ধরে রাখে । কিন্তু গাছের পরিমানও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে । তৃতীয়ত,খড়ি নদী তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় সাব সারফেস ফ্লো বা ফ্লুইড মেকানিজমের ব্যাঘাত ঘটছে বলেই ধ্বসের ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি ৷।