দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৭ মে : পাশের গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল স্ত্রী । একবার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েও গিয়েছিলেন । তবুও দুই সন্তানের মুখ চেয়ে স্ত্রীর এই অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন স্বামী । ভেবেছিলেন বাড়ি থেকে সরে গিয়ে অন্য কোথাও গেলে হয়ত নিজের ভুল সুধরে নেবে স্ত্রী । সেই কারনে স্ত্রীকে নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষহাট পালপাড়ায় একটি ভাড়া ঘরে উঠেছিলেন পূর্বস্থলীর নিমদহ ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় জনমজুর সন্টু পণ্ডিত । কিন্তু ভাড়া ঘরে আসার রাতে প্রেমিকের সঙ্গে স্ত্রীর প্রেমালাপের সময় ঘুম ভেঙে গেলে তিনি আর নিজের মাথা আর ঠিক রাখতে পারেননি । সেই রোষেই স্ত্রীর গলা গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছেন স্ত্রীকে খুনে ধৃত সন্টু পণ্ডিত ।
কাটোয়া শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষহাট পালপাড়ার বাসিন্দা গোপাল কোনার নামে এক ব্যক্তির বাড়ির একটি ঘর ভাড়া করেছিলেন সন্টু পণ্ডিত । বৃহস্পতিবার(২৫ মে ২০২৩) স্ত্রী সুমিত্রা পণ্ডিতকে (৩২) নিয়ে ওই ভাড়া ঘরে ওঠেন তিনি । শুক্রবার সকালে গোপালবাবুর স্ত্রী লক্ষ্য করেন ঘরের দরজায় শিকল দেওয়া রয়েছে । কিন্তু একটা চটি পড়ে রয়েছে দরজার সামনে । সন্দেহ হওয়ায় তিনি শিকল খুলে ঘরে ঢুকতেই সুমিত্রা পণ্ডিতের নিথর দেহ বিছানায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে দেখেন । তারপর থেকেই ফেরার ছিলেন মহিলার স্বামী । ওই খুনের ঘটনায় কাটোয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির মালিক গোপাল কোয়ার । তার ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে মৃতার স্বামীর সন্ধানে তল্লাশি চালাতে শুরু করে পুলিশ । অবশেষে শুক্রবার পূর্বস্থলী থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত স্বামীকে ।
জানা গেছে,সন্টু পণ্ডিত ও সুমিত্রা পণ্ডিতের এক ছেলে ও এক মেয়েও রয়েছে । পূর্বস্থলীর নিমদহ ঘোষপাড়ার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুমিত্রা পণ্ডিত । একবার তিনি প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েও গিয়েছিলেন তিনি । পরে ফিরে এলে বধূকে বাড়িতে তুলতে অস্বীকার করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন । কিন্তু ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে স্ত্রীকে শোধরানোর একটা সূযোগ করে দিয়েছিলেন সন্টুবাবু । স্ত্রীর মন পরিবর্তনের জন্য কলকাতাতেও ঘরভাড়া করে ছিলেন কিছুদিন । কিন্তু সীমিত আয়ে শহরে দু’জনের খরচখরচা তিনি আর চালিয়ে উঠতে পারছিলেন না । সেই কারনে স্ত্রীকে নিয়ে কাটোয়া একটা ভাড়া ঘরে এসে উঠেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সন্টু পণ্ডিত ।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রেমিকের প্রেমালাপ শুনে বুঝতে পারেন স্ত্রীর মন পরিবর্তনের সব চেষ্টাই বৃথা গেছে । গোপনে প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছে তার স্ত্রী । এরপর তিনি নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেননি । শেষে স্ত্রীকে খুনের তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বলে পুলিশের জেরায় কবুল করেছেন ধৃত স্বামী ।
শুক্রবার রাতে সন্টুকে পূর্বস্থলী থেকে গ্রেফতার করে কাটোয়া থানার পুলিশ । শনিবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় ।।