প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ মে : গামছাই যেন আততায়ীর হাতিয়ার ! একই দিনে পৃথক তিন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া তিনটি মৃতদেহের গলাতেই জড়ানো থাকে গামছার ফাঁস ।আর তিন জনেই খুন হয়েছেন বলে তাঁদের পরিজনরা দাবি করেন । তা নিয়ে শুক্রবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির কৈশাসপুর,কাটোয়ার ঘোষহাট পালপাড়া ও কালনা শহরের শ্যামলাল পাড়ায় । তদন্তে নেমে পুলিশ বাসুদেব ক্ষেত্রপাল, সুমিত্রা পণ্ডিত ও মহাদেব মল্লিক এর মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিৎ হতে এদিনই মৃতদেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কি আসে সেদিকেই এখন তাকিয়ে নিহতদের পরিজনরা ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,বছর ৪৮ বয়সী বাসুদেব ক্ষেত্রপাল মেমারি থানার নিমো ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কৈলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন ক্ষেতমজুর । এদিন সকালে পুলিশ গ্রামের একটি তিন জমিথেকে উদ্ধার করে বাসুদেব ক্ষেত্রপালের নিথর দেহ । মৃত ব্যক্তির ভাই বানেশ্বর ক্ষেত্রপাল বলেন,’আমার পিসতুতো দাসা বাসুদেব ক্ষেত্রপাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে ঠাকুর পুজো তলায় যায় । তার পর থেকে আর বাড়ি ফেরেনি। এদিন সকালে গ্রামের তিন জমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বাসুদেবের গলায় গামছার ফাঁস জড়ানো রয়েছে। মাথায় আঘাতের ক্ষতও দেখতে পাওয়া যায় ।’ বানেশ্বর বাবু দাবি করেন মৃতদেহ দেখে তিনি মনে করছেন তাঁর দাদা বাসেদেবকে খুন করা হয়েছে। মদের আসরে এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁর অনুমান। মাথায় মদের বোতল দিয়ে মারর পর গলায় গামছার ফাঁস এঁটে দেওয়াতেই বাসুদের মৃত্যহয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বানেশ্বর ক্ষেত্রপাল । মৃত বাসুদেবের স্ত্রী কাকলি ক্ষেত্রপাল বলেন,’বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মদ খেতে বেরিয়ে আমার স্বামী খুন হয় ।’ তবে কি কারণে বাসুদেব কে খুন হতে হল,কারা খুন করে থাকতে পারে সেইসব বিষয়ে কাকলিদেবী নিশ্চিৎ করে কিছু জানাতে পারেন নি। এই বিষয়ে পুলিশের তদন্তের উপরেই তিনি আস্থা রেখেছেন। মহকুমা পুলিশ পুলিশ আধিকারিক ( বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে । তার ভিত্তিতে পরবর্তী যা পদক্ষেপ নেওয়ার নেওয়া হবে ।
একই দিনে কাটোয়ার ঘোষহাট পালপাড়ায় একটি টালির ছাউনি দেওয়া ভাড়া বাড়ির ঘরের বিছানা থকে উদ্ধার হয় বছর ৩০ বয়সী বধূ সুমিত্রা পণ্ডিত
এর মৃতদেহ । এই বধূর গলাতেও জড়ানো ছিল গামছার ফাঁস। মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকে বধূর নামে থাকা প্যান কার্ড । যদিও বৃহস্পতিবার বধূর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে আসা তাঁর স্বামীর কোন হদিশ মেলে না ।কাটোয়া থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে বধূ মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।পুলিশের প্রাথমিক অনুমান বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে ওই বধুকে খুন করা হয়েছে ।
ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক আঙ্গুর পণ্ডিত জানান,
তাঁর ভাগ্না বিমল পণ্ডিতের বাড়ি পূর্বস্থলীর পিলে এলাকায় ।ভাগনার সুপারিশেই তিনি দম্পতি পরিচয় দেওয়া জুটিকে মাসিক হাজার টাকায় চুক্তিতে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। বিমল জানিয়েছিল,সুমিত্রা নামের মহিলার স্বামী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির নাম সন্টু । বিমল এও বলেছিল , সন্টু হল তার বন্ধু । তবে ’সন্টু’ নামধারী ওই ব্যক্তি আদপেই মহিলার স্বামী কিনা তা নিয়ে পুলিশও সন্দিহান । সুমিত্রা পণ্ডিতকে খুনের ঘটনায় পুলিশের যাবতীয় সন্দেহের তীর এখন ওই সন্টুর দিকেই ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রব দাস জানিয়েছেন,মহিলার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে মহিলার মৃত্যুর কারন স্পষ্ট হবে । তার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
আন্যদিকে গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় জেলার কালনা শহরের শ্যামলাল পাড়ায় এক শিক্ষকর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনাতেও খুনের অভিযোগ উঠেছে। মৃত ওই শিক্ষকোর নাম মহাদেব মল্লিক(৫৮)।তিনি শাসপুর দিঘিরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।কালনা থানার পুলিশ শুক্রবার বাড়ি থেকে শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় । এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মেনেনিতে পারেননি শিক্ষকের পরিবার । তাঁদের অভিযগ শিক্ষক মহাদেব মল্লিক খুন হয়েছেন।
মৃত শিক্ষকের স্ত্রী ঝর্ণা মল্লিক জানিয়েছেন,তিনি তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন
।বৃহস্পতিবার তার স্বামী মহাদেব মল্লিক বাড়িতে একাই ছিলেন। রাতে মহাদেববাবুর সঙ্গে তাঁর কথাও হয়। এর পর শুক্রবার সকালে তিনে শোনেন তাঁর স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন। এমনটা শুনেই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। ঝর্নাদেবী এদিন দাবি,করেন,তাঁর স্বামী প্রতিবন্ধী।স্বামীর ডানহাতে ন্যূনতম শক্তি বলে কিছু ছিল না। নেই । স্বামী একহাতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঝুলবেন কি করে ? মৃতদেহের কাছ থেকে সুইসাইড নোট উদ্ধার হলেও সেই হাতের লেখা তাঁর স্বামীর নয় বলেও দাবি করেন ঝর্না মল্লিক। ঝর্ণাদেবীর স্পষ্ট অভিযোগ,’তাঁর স্বামী কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেনা। পরিকল্পনামাফিক তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে।’ তাঁর যাবতীয় অভিযোগের তীর প্রতিবেশীর দিকে । ঝর্ণাদেবী কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের করে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার আবেদন জানিয়েছেন । পুলিশ অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে ।।