এইদিন ওয়েবডেস্ক,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),০৫ এপ্রিল : প্রসব যন্ত্রনায় কাতর গর্ভবতী বধূকে ভর্তি না করে বর্ধমানে রেফার করে দিয়েছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক । তাই বধুকে হাসপাতালের বিশ্রামাগারে নিয়ে এসে আ্যম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁর শ্বাশুড়ি ও পাড়ার দাইমা । সেই সময় বিশ্রামাগারেই সন্তান প্রসব করেন ভাতার থানা এলাকার ঝর্ণা গ্রামের পিঙ্কি হাওলাদার (২৮) নামে ওই গৃহবধু । সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা হাসপাতালে । এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন রোগীর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা । এদিকে অশান্তির আঁচ পেয়ে ওই বধু ও তাঁর নবজাতককে তড়িঘড়ি ভর্তি করে নেয় গুসকরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে । সেখানেও প্রসব যন্ত্রনায় কাতর বধুকে হাসপাতালে ভর্তি না করে রয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা । তারপর বধুকে হাসপাতাল চত্বরের একটি গাছের তলায় শুইয়ে রেখে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন পরিবারের লোকজন । কিন্তু দীর্ঘক্ষন প্রতীক্ষা করার পরেও অ্যাম্বেন্সের দেখা মেলেনি । এদিকে গাছ তলাতেই প্রসব হয়ে যায় বধুর । এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন ও এলাকার মানুষ । এরপর ফের এদিন গুসকরা হাসপাতালে একই ধরনের ঘটনা ঘটায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,এদিন সকালে ঝর্ণা গ্রামের বাসিন্দা পিঙ্কি হাওলাদার নামে বধূর স্বামী যথারীতি কাজে বেড়িয়ে যান । এদিকে স্বামী বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই প্রসব বেদনা শুরু হয় বধুর । বধুর শ্বাশুড়ি সন্ধ্যাদেবী প্রতিবেশী সান্তনা বিশ্বাসকে ডাকেন । সান্তনাদেবী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাইমা । তারপর দু’জনে মিলে বধুকে একটি টোটোয় করে গুসকরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন । অন্য একটি টোটোয় চড়ে পাড়ার তিন চারজন তাঁদের সঙ্গে হাসপাতালে আসেন ।
সান্তনাদেবীর বলেন, ‘বউমাকে নিয়ে সবে হাসপাতালে আসতেই একজন নার্স আমাদের মেজাজ দেখাতে শুরু করেন । আমি সমস্ত প্রেসক্রিপশন দেখাই । তা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করছিল ওই নার্স । এই দেখে ডাক্তারবাবুকে ডাকতে যাই । কিন্তু ডাক্তারবাবু একপ্রকার বউমাকে না দেখেই বর্ধমান হাসপাতালে রেফার করে দেন ।’
জানা গেছে,এরপর বধুকে হাসপাতালের বিশ্রামাগারে এনে মাতৃযান ডাকতে যায় বধুর সঙ্গে আসা পাড়ার লোকজন । সেই সময় বিশ্রামাগারেই এম কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই বধু । এই ঘটনার পরেই বধুর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা গাফেলতির অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি বধু ও নবজাতককে ভর্তি করার ব্যাবস্থা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । বর্তমানে বধু ও তাঁর সন্তান সুস্থ আছে বলে জানা গেছে ।
এই বিষয়ে আউশগ্রাম-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাজু সানা বলেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই নার্সকে শোকজ করা হবে।’ যদিও বধুর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ মানতে চাননি হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স শিখা মিত্র ।।