এইদিন ওয়েবডেস্ক,রংপুর(বাংলাদেশ),২৪ মে : হিন্দু ধর্মের অপমান,মন্দির অপবিত্র করা,দেবদেবীর প্রতিমা ভাঙচুর করেও রেহাই পেয়ে যায় বাংলাদেশের ইসলামি জিহাদিরা । কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কোনো হিন্দু মুখ ফসকে কিছু বললেই তার উপর নেমে আসে কঠিন সাজার খাঁড়া । ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টকে কেন্দ্র করে এক হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলে কঠোর শাস্তি দিল বাংলাদেশের একটা আদালত । মঙ্গলবার বাংলাদেশের রংপুরের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত টিটু রায় নামে ওই হিন্দু যুবককে ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৫ মাস অতিরিক্ত কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে । বিচারপতি আব্দুল মজিদ এই সাজা ঘোষণা করেন । টিটু রায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের নবীকে নিয়ে অপমানজনক পোস্ট করার অভিযোগ তোলা হয়েছে ।
জানা গেছে,রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার অন্তর্গত ঠাকুরপাড়া গ্রামে বাড়ি টিটু রায়ের । টিটু রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটি ওঠে ২০১৭ সালে । তখন তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় থাকতেন । “এমডি টিটু” নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ওই বছর ২৮ অক্টোবর মুসলিমদের নবীকে নিয়ে একটা পোস্ট করা হয় । সেই পোস্টে ইসলামের নবীর ৬ বছরের এক শিশুকে বিয়ে করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কিছু মন্তব্য করা হয়েছিল । যদিও টিটু রায়ের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার রায় বলেন,’সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পেশ করা ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে টিটুর মোবাইল থেকে ফরেনসিক পরীক্ষায় ফেসবুকে পোস্ট করার কোনও প্রমাণ মেলেনি ।’ পাশাপাশি তিনি জানান, টিটু রায় নিরক্ষর । একজন নিরক্ষরের পক্ষে কিভাবে ফেসবুকে একটা বয়ান পোস্ট করা সম্ভব, এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বাংলাদেশের মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে,ওই ফেসবুক পোস্টটি নিয়ে ঝামেলা পাকায় বাংলাদেশের ইসলামি কট্টরপন্থীদের দল । ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলা চালায় উন্মত্ত জিহাদিরা । হিন্দুদের বেশ কিছু বাড়িঘরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় । তারপরেই টিটু রায়কে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । অথচ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ একটা জেনারেল ডাইরি পর্যন্ত করেনি বলে অভিযোগ । ফলে আজও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত দুষ্কৃতীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায় ।
মঙ্গলবার টিটু রায়-এর সাজা ঘোষণার পর এনিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে । যদিও নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে এনিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায়নি ৷ টিটু রায়ের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার রায় বলেছেন,’এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো ।’
প্রসঙ্গত,ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ফাঁসানোর ঘটনা পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আকছার ঘটে থাকে । ওই দুই দেশে পুলিশ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে কট্টর মৌলবাদী মানসিকতা ঢুকে যাওয়ায় এযাবৎ কোনো নিরপরাধ হিন্দুই ন্যায় বিচার পায়নি । বিনা অপরাধেই তাদের কঠোর সাজার মুখে পড়তে হয়েছে । ফলে টিটু রায়ের মামলায় উচ্চ আদালতে গিয়েও কোনো কাজের কাজ হবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশি হিন্দুরা।।