প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ মে : তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যখন বিজেপি বিরোধীতায় স্বোচ্চার সেই সময়ে বিজেপি সাংসদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ সারলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান।শুধু সাক্ষাত করাই নয় ,পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাঘাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছন্দা রায়, বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে হাসি মূখে ছবিও তুললেন। আর সেই ভিডিও ছবি মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যনে ভাইরাল হতেই তুমুল শোরগোল পড়ে যায় মন্তেশ্বরের রাজনৈতিক মহলে । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিজেপি সাংসদের সাক্ষাৎ নিয়ে জোর চর্চাও শুরু হয়ে যায়। যদিও সক্ষাতের কথা স্বীকার করে নিয়ে প্রধান দাবি করেন,’আমি তৃণমূলেই রয়েছি। উন্নয়ন কাজ নিয়ে কথা বলতে আমি বিজেপি সাংসদের কাছে গিয়েছিলাম । আমার এখন বিজেপিতে যাবার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা ।’
বিজেপি নেতৃত্ব সোমবার মন্তেশ্বরের মালডাঙার একটি কনফারেন্স হলে বিধানসভা ভিত্তিক
পর্যালোচনা বৈঠক করে। সেই বৈঠকে বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বের কথায় ,তাদের বৈঠক শেষ হবার মুহুর্তে কনফারেন্স হলেই পৌঁছে যান তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধান ছন্দা রায়।ছন্দাদেবী বেশ কিছুক্ষণ বিজেপি সাংসদের সঙ্গে কথাও বলেন।তারপর সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রধান হাসিমুখে ছবিও তোলেন।
সেই ছবি-ই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিজেপি সাংসদদ সঙ্গে সাক্ষাৎতের বিষয়ে এদিন পঞ্চায়েত প্রধান ছন্দা রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,’সাংসদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাংটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ । পাশাপাশি তিনি এও জানান,তাঁর পঞ্চায়েত এলাকার খাঁপুরে কোনও শ্মশান নেই।সেখানে সোলার লাইটও নেই। এই দুটো স্কিমে ভুল ছিল । সেটি ঠিক করার জন্যেই পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে সাংসদের কাছে গিয়েছিলেন বলে প্রাধান জানান । বিরক্তি প্রকাশ করে এর বাইরে আর কোন কথা বলতে প্রধান অস্বীকার করেন ।
নব জোয়ার কর্মসূচিকে সামনে রেখে কয়েকদিন আগে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকা চষে ফেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তখনই তিনি দলের সকল স্তরের নেতা ও কর্মীদের এখন থেকেই কমর বেঁধে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে নেমে পড়ার বার্তা দেন। পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের করা উন্নয়ন কাজের বিষয়গুলি নিয়ে বুথ স্তরে প্রচার জোরদার করার কথাও বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়,২৪ শের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী শক্তিশালি জোট গড়ে তোলার জন্যেও দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বত ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্তেশ্বরের বাঘাসন অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন রায় এইসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন, এমনটা নয় । তবু তাঁর স্ত্রী ছন্দাদেবী তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে কেন উন্নয়ন কাজের বিষয়ে বিজেপি সাংসদের দ্বারস্থ হলেন তার উত্তর খুঁজছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ।ওই সাক্ষাৎ কি নেহাতই সৌজন্য মূলক ছিল,নাকি সাক্ষাৎতের পিছনে অন্য কোন রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করেছে সে বিষয়েও তৃণমূল নেতৃত্ব খৌঁজ নিচ্ছেন।
মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আজিজুল হক এদিন বলেন,’বিষয়টি আমিও শুনেছি।এই বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে ।’ আর সবিস্তার খোলসা করে বর্ধমান- দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এদিন বলেন,’ছন্দা রায় আমাকে প্রণাম করতে এসেছিল । কোন রাজনৈতিক কারণে আমার সঙ্গে দেখি করতে আসেননি । ছন্দা যখন স্কুলে পড়তো তখন থেকেই আমি ওকে চিনি । ওর বিয়েতে বরযাত্রীর সেবা করার কাজ আমি করেছি । ছন্দার দাদার বিয়েতেও আমি বরযাত্রী হয়ে গিয়েছিলাম । ওদের বাড়ির সঙ্গে আমার একটা আলাদা সম্পর্ক আছে ।’ আহলুওয়ালিয়াজি এও বলেন,’আমি এমপি হয়ে ছন্দার এলাকায় গেছি জেনে ছন্দা দেখা করতে এসেছিল। সবটাই ছিল একান্ত সৌজন্য সাক্ষাৎ। ওই সময়ে কথার কথায় ডেভেলপমেন্ট কাজের প্রসঙ্গও ওঠে আসে ।’।