দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২১ মে : বোরো ধান ঝাড়ার পর অবশিষ্ট খড়কুটো সড়ক পথের একধারে শুকতে দিয়েছিলেন খেতমজুর দম্পতি । আজ রবিবার সকাল ৮-টা নাগাদ ওই খড়কুটো থেকে অবশিষ্ট ধান সংগ্রহ করছিলেন তাঁরা । সেই সময়ে একটি বেপরোয়া গতির বালিবোঝাই ট্রাক্টর তাদের পিষে দেয় । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় স্বামীর । আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী । দূর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের শ্যামবাজার মোড়ের কাছে । ঘটনার পর মৃত উত্তম সর্দার(৫২)-এর দেহ রাস্তায় ফেলে রেখে মৃতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে পথ অবরোধ শুরু করে ক্ষিপ্ত জনতা । দীর্ঘক্ষণ অবরোধের পর শেষে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় । পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে ।
স্থানীয় সূত্রে খবর,মঙ্গলকোট থানার শ্যামবাজারের সর্দারপাড়ায় বাড়ি উত্তম সর্দারের । উত্তম সর্দার ও তার স্ত্রী টুনু সর্দার(৪৬) খেতমজুরের কাজ করতেন । পাশাপাশি অল্পস্বল্প জমিতে চাষবাস করতেন ওই দম্পতি । এবারে কাঠা পাঁচেক জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তারা । দিন কয়েক আগে মাঠ থেকে ধান তুলে ঘরে আনেন । ধান ঝাড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে । কেবল খড়কুটো থেকে অবশিষ্ট ধান সংগ্রহ করার কাজ বাকি ছিল । তারজন্য এদিন সকালের দিকে শ্যামবাজার- কাটোয়া সড়ক পথের একধারে খড়কুটো বিছিয়ে রেখে দিয়েছিলেন ওই দম্পতি । সকাল আটটা নাগাদ তারা ধান সংগ্রহ করার কাজ করছিলেন ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,ওই দম্পতি যখন একমনে ধান সংগ্রহ করছিলেন সেই সময় ফুলবাগানের দিকে আসছিল বালি বোঝাই ঘাতক ট্রাক্টরটি । দম্পতির কাছাকাছি আসতেই চালক ট্রাক্টরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । এরপর রাস্তার বাম দিক ঘেঁষে গিয়ে ওই দম্পতিকে ধাক্কা দেয় ট্রাক্টরটি । দূর্ঘটনার পরেই ট্রাক্টর ফেলে চম্পট দেয় চালক । এদিকে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় উত্তম সর্দারের । তার স্ত্রী স্ত্রী টুনু সর্দারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে ।
প্রসঙ্গত,মঙ্গলকোটে অজয় নদে বেআইনিভাবে বালি উত্তোলন করে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের ।
স্থানীয় গ্রামবাসী মৌসুম দত্ত, বিমল চট্টরাজরা জানান,ঘাতক ট্রাক্টরটিতে মাজিগ্রাম অঞ্চলের বনপাড়ায় অজয়নদের বালিঘাট থেকে বালি বোঝাই করা হয়েছিল । প্রতিদিন অসংখ্য বালি বোঝাই ট্রাক্টর,ডাম্পার ও যাতায়তের কারনে একদিকে যেমন এলাকার রাস্তাগুলি অল্প সময়ে বেহাল হয়ে যায়,পাশাপাশি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে আকছার দূর্ঘটনার শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে । তাদের অভিযোগ,অজয় নদ থেকে বেআইনি বালি উত্তোলন রুখতে ইতিপূর্বে তারা একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছিলেন । ভূমদপ্তর,পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাসও মেলে । কিন্তু তারপরেও অজয় থেকে বালি পাচার যথারীতি চলে যাচ্ছে । এনিয়ে তারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।।