জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,১৮ মে : সংসদীয় গণতন্ত্রে যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে জনসংযোগ অপরিহার্য। প্রতিটি দল এর মাধ্যমে জনগণের কাছে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়। শাসকদল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও শক্তিশালী বিরোধীরা খুব একটা পেছিয়ে থাকে না ।
জনগণের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা যাইহোক না কেন সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকার কী কী কাজ করেছে সেটা শাসকদলের নেতারা তুলে ধরার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় মিটিং, মিছিল। দলের জনপ্রিয় প্রথম সারির নেতারা নেমে পড়ে জনসংযোগে। কাছে পেয়ে জনগণও তাদের অভাব অভিযোগ নেতার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে যায়।
অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে দুর্বল হলেও, বিরোধীরা চেষ্টা করে সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি মানুষের সামনে তুলে ধরতে। তারাও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মিটিং, মিছিল সংগঠিত করার চেষ্টা করে। এটাই হলো গণতন্ত্র।
সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ‘নব জোয়ার’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছেন। দলের নেতা হিসাবে তিনি সেটা করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেখানে তার কর্মসূচি হচ্ছে সেখানে ও তার আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীবাহী বাস বা অন্যান্য যানবাহন বন্ধ রাখা হবে কেন? কেন জনবহুল সড়কপথ থেকে স্পীড ব্রেকার তুলে দেওয়া হবে ? তিনি তো গেছেন জনগণের দরবারে। অথচ জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা কখনোই কাম্য নয়।
একই কথা প্রযোজ্য বিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রে। কলকাতায় বিরোধী দলনেতা বা বিরোধী দলগুলো মিটিং করছে, ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রাখা হচ্ছে। রাস্তার উপর অসহায়ভাবে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে গাড়িগুলোর কর্মীরা। কি অপরাধ তাদের? কখনো কখনো বিভিন্ন রুট থেকে যাত্রীবাহী বাস তুলে নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি একমাত্র ভুক্তভোগীরা জানে।
হোকনা দলীয় পতাকা, তবুও পতাকার একটা আলাদা মর্যাদা আছে। নেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার আগমনের পথে প্রবল উৎসাহে কর্মীরা রাস্তার দুধারে হাজার হাজার পতাকা টাঙিয়ে দেয়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাস্তার দু’ধারে অসহায় ভাবে পড়ে থাকে পতাকা। তার উপর পা দিয়ে চলে যায় পথচলতি মানুষ। বড় দৃষ্টিকটু লাগে। অনুষ্ঠানের শেষে পতাকাগুলি খুলে নেওয়া যায় না?
ভোটের সময় দেওয়াল লিখন যেন বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার অর্থ ব্যয় করে সাধারণ মানুষ বাড়ির রঙ করছে অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা দেওয়াল লিখন করে সেটা নষ্ট করে দিচ্ছে। ভয়ে মানুষ কিছু বলতে পারছেনা। দু’বছর আগে শেষ হয়েছে বিধানসভা ভোট, একবছর আগে পুরভোট। অথচ এখনো মানুষের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের নাম। এরপর পঞ্চায়েত ও পরে লোকসভা ভোট। সুতরাং আবার দেওয়াল লিখন। এতে তো দৃশ্য দূষণও ঘটছে।
জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি করে, দলীয় পতাকার অপমান করে অথবা সাধারণ মানুষের ঘরের দেওয়াল নষ্ট করে এধরনের কর্মসূচির কি খুব দরকার আছে? বিকল্প নিয়ে ভাবতে শুরু করুক রাজনৈতিক দলগুলো। সন্দেহ হয় সেই যোগ্যতা বা আগ্রহ এদের আছে তো ?