এইদিন ওয়েবডেস্ক,ময়না(পূর্ব মেদিনীপুর),০২ মে : সোমবার রাতে খুন হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) ময়না (Moyna) ব্লকের বাকচা অঞ্চলের বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া (Vijaykrishna Bhuiya) । তাঁকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে । এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দায়ি করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মঙ্গলবার বাকচায় জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সমগ্র ঘটনার পরিকল্পনা করেছে মমতার তিনটি পুলিশ-অমরনাথ(পুলিশ সুপার),হাসান(অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) আর প্রাক্তন ওসি গোপাল বা গোপলা । এই তিনজনই হল মূল পরিকল্পনাকারী । আর তাদের উসকানি দাতা হচ্ছে সৌমেন মহাপাত্র,সংগ্রাম দলুই,শেখ শাহজাহান, উত্তম বারিক,মনোরঞ্জন হাজরা । এই ৫ জনের প্রকাশ্য উসকানিতে এই ঘটনা ঘটেছে । এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
তিনি বলেন,’শুধু মামলা, সিবিআই তদন্তই নয়,জাতীয় এসটি কমিশনেও নিহতের ছেলেকে দিয়ে অভিযোগ করানোর ব্যবস্থা করছি । সোজা কেমন করতে হয় শুভেন্দু অধিকারী জানে । এই লড়াই আমরা জিতবো । খুনি মমতার শেষ দেখে ছাড়বো । অমরনাথ আর তার সহযোগী হাসান পরিকল্পনা করে এই খুন করেছে । এদেরও ছাড়া হবে না । মোমিনপুর -ইকবালপুর ঠান্ডা করেছি, এখানে কি হয় দেখতে থাকুন ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন,’এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । গত কয়েক মাস ধরে অলক বেরা,সম্রাটের মত অনেক নেতৃত্বকে পুলিশ ভয় দেখিয়ে দলবদল করিয়েছে । সম্রাট ফিরে এসেছে । অলক বেরা এখনো ওদের কাছে আছে । এটা বড় ষড়যন্ত্র । ময়নার বাগচা ফেলতে পারলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ময়না ব্লকে তৃণমূলকে আবার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে । কারন ২০১৮ সালে এখানে তৃণমূল জেতেনি । আপনাদের নমিনেশন আটকে দিয়ে গায়ের জোরে জিতেছে ।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’পরিতাপের বিষয় এটাই,ওই এলাকার আমাদের দলীয় বিধায়ক থেকে সকলে ওসি থেকে এসপি পর্যন্ত কাতর আবেদন করেন যাতে প্রবীণ বিজয় ভূঁইয়ার মহাশয়কে রক্তাক্ত হলেও জীবন্ত ফিরিয়ে দিন । পুলিশ সে কাজ করেনি, উলটে খুনিদের কাছ থেকে বিজয় ভূঁইয়ার নিথর দেহ সংগ্রহ করেছে পুলিশ । ভাবতে লজ্জা লাগে,মমতা ব্যানার্জির খুনিদের কাছ থেকে মমতার পুলিশ অমরনাথের নেতৃত্বে, হাসান বলে এক অ্যাডিশনাল এসপির নেতৃত্বে বিজয় ভূঁইয়ার নিথর দেহকে সংগ্রহ করে চোরের মত,ময়না দিয়ে না এনে নালা পেরিয়ে ভগবানপুর দিয়ে নিয়ে গিয়ে তমলুকের মর্গে রেখেছে । এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই । পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোথাও খুনিদের কাছ থেকে দেহ সংগ্রহ করল মমতার পুলিশ ।’
অবরোধ কর্মসূচিতে শুভেন্দু বলেন,’এই ময়নার বাকচাতে ২০১৮ সাল থেকে এযাবৎ প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা করেছে । গত ৫ বছরে ১০০০ এর বেশি বিজেপি কর্মী জেল খেটেছে । এখনো পঞ্চায়েত সদস্য প্রসেঞ্জিতের মত অনেকে জেলের ভিতরে আছে । ৩ থেকে ৪ জন কর্মী বিগত ৩-৪ বছরের মধ্যে এই এলাকায় প্রাণ দিতে বাধ্য হল দূর্বৃত্ত মমতা ব্যানার্জির জন্য । যিনি পশ্চিমবঙ্গকে শুধু চুরি দূর্নীতি নয়,জঙ্গলের রাজত্বে পরিণত করেছেন । আর পুলিশকে নিজের শাখাসংগঠন ও দলদাসে পরিনত করেছেন ।’
তিনি দলীয় কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেন,’আপনারা আমার ও আমাদের দলের উপর বিশ্বাস রাখুন । আমরা বাকচাকে স্থানী সমাধান দেবো । নন্দীগ্রামে দেবব্রত মাইতি শহীদ হওয়ার পরে বলেছিলাম স্থায়ী শান্তি দেবো । নন্দীগ্রামে তৃণমূলের জিহাদিরা সিবিআই তদন্তের পরে স্থায়ী শান্তিতে আছে । খেজুরিতে বলেছিলাম স্থায়ী শান্তি দেবো । এনআইএ হওয়ার পরে খেজুরি ও ভূপতিনগরে স্থায়ী শান্তি এসেছে । গত বছর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর দিন মোমিনপুর ইকবালপুরের ঘটনার পরে বলেছিলাম এনআইএ আসছে,মোমিনপুর ইকবালপুর স্থায়ী শান্তি পাবে । রামনবমীর দিন হাওড়াতে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম-হাওড়া,রিষড়া ও ডালখোলা শান্তি পাবে । এনআইএ তদন্ত হচ্ছে তারাও স্থায়ী শান্তি পাবে ।
আর আজকেও বিজয় ভূঁইয়ার রক্তকে স্বাক্ষী রেখে বাগচাকে বলে গেলাম, আপনারাও স্থায়ী শান্তি পাবেন । ছাড়ার কোনো সিন নেই,আজ থেকে দায়িত্ব আমি নিলাম । কি করে মমতা ব্যানার্জি আর তার পুলিশকে সাঁড়াশিতে আটকাতে হয় এ বিদ্যাবুদ্ধি শুভেন্দু অধিকারীর আছে,আমি করে দেখাবো ।’ তিনি বলেন,’বিজয়বাবুর ছেলে প্রসেনজিৎ এখন কলকাতা হাইকোর্টে রয়েছেন । আমরা মমতা ব্যানার্জির হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে দেবো না । কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে । সিবিআই তদন্ত করতে হবে । তবে সোজাসুজি হবে না, আইনি লড়াই করে অধিকার কেড়ে নিতে হবে । হাইকোর্টে প্রক্রিয়া চলছে ।।