এইদিন ওয়েবডেস্ক,কানাডা,২৫ এপ্রিল : বিশিষ্ট লেখক তারেক ফতেহের মৃত্যুতে যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোকজ্ঞাপন করছেন,তখন অন্যদিকে মুসলিম কট্টরপন্থীরা ‘হাহাহা’ প্রতিক্রিয়া দিয়ে খুশি প্রকাশ করছে । অনেক কট্টরপন্থীকে হাসির ইমোজিও পোস্ট করতে দেখা গেছে । ইসলামের সংস্কারে বিশ্বাসী ও ইসলামি কট্টপন্থার সমালোচক বলে চিহ্নিত তারেক ফতেহের মৃত্যুতে এই প্রকার অমানবিক আচরণে ওই সমস্ত লোকজনদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
তারেক ফতেহ ১৯৪৯ সালের ২০ নভেম্বর করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের সময় তার পরিবার বোম্বে থেকে করাচিতে চলে যান । ষাটের দশকে তিনি একজন বিপ্লবী ছাত্রনেতা হিসেবে নিজের ছাপ রেখেছিলেন । তখন তিনি নির্ভীক সাংবাদিকতার স্বীকৃতি পান । একারনে তাঁকে বহুবার জেলে যেতেও হয়েছিল । অবশেষে তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করে পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন । তারেক ফতেহ ইসলামের ইতিহাসের উপর বই লিখেছেন । তিনি ইসলামি কট্টপন্থার সমালোচক ছিলেন । খোলাখুলি ভাবে এনিয়ে তিনি নিজের মত প্রকাশ করতেন । নিজেকে ‘পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী ভারতীয়’ হিসাবে বর্ণনা করতেন এবং তার পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিলেন তা স্বীকার করতে তার কোন দ্বিধা ছিল না। তারেক ফতেহ পাঞ্জাবি মুসলিম পরিবার থেকে এসেছেন । তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ‘মুসলিম ক্রনিকল’ নামে একটি শো পরিচালনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । ইসলাম ও মুসলিম সমাজের সংস্কারের পক্ষে ছিলেন তারেক । তার বই ‘দ্য জেউ ইজ নট মাই এনিমি’ এবং ‘চেজিং এ মিরাজ’-এ তা প্রতিফলিত হয়েছে । পাকিস্থান ও বাংলাদেশের ইসলামিকরণ ও কট্টর মৌলবাদী মানসিকতার প্রায়ই সমালোচনা করতে দেখা যেত তারেক ফতেহকে । ভারতে বসবাসকারী মুসলিম মৌলবাদীদের কট্টরপন্থী মানসিকতার মুখোমুখি সমালোচনা করতে দেখা যেত বিশিষ্ট এই বুদ্ধিজীবীকে ৷
ভারতের একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলে ‘ফতেহ কি ফতোয়া’ নামে তাঁর একটি অনুষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল । সেই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভারতের মৌলবাদীদের আসল স্বরূপ সকলের সামনে এনেছিলেন তারেক ফতেহ । একারণে তাঁকে মৌলবাদীদের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছিল । তিনি প্রায়ই তথ্য ও ইতিহাস সামনে রেখে পাকিস্তানকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করতেন। তারেক ফতেহ বলতেন, মৌলবাদীরা ‘মোল্লার ইসলামে’ বিশ্বাস করে যেখানে তিনি ‘আল্লাহর ইসলামে’ করেন ।
মুক্তমনা এই বুদ্ধিজীবীর মেয়ে নাতাশা ফতেহ তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। তার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার সময় নাতাশা ফতেহ বাবাকে ‘পাঞ্জাবের সিংহ’, ‘ভারতের পুত্র’, ‘কানাডার প্রেমিক’, ‘সত্যের বক্তা’, ‘ন্যায়বিচারের যোদ্ধা’ এবং ‘নিঃস্বদের ত্রাণ’ হিসাবে বর্ণনা করেন । সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, তারিক ফতেহ অবশেষে তার মশাল হস্তান্তর করেছেন। যারা তাঁকে জানেন এবং ভালবাসেন তারা আশা করেছিলেন যে তাঁর দ্বারা শুরু হওয়া বিপ্লব অব্যাহত থাকবে । এখন আপামর ভারতবাসীর আশা বাবার আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তারেক ফতেহের মেয়ে ।।