দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২০ এপ্রিল : কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বউদিকে খুনের চেষ্টার মামলায় দেওরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা আদালত । সাজাপ্রাপ্তের নাম রতন ঘোষ । তার বাড়ি কাটোয়া থানার পলসোনা গ্রামে । বৃহস্পতিবার কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের(প্রথম) বিচারক সুকুমার সূত্রধর অভিযুক্ত ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছ’ মাস অতিরিক্ত কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন ।
নিহত বধূর নাম বুল্টি ঘোষ । ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর রাতের দিকে । ওইদিন রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে বুল্টিদেবী তাঁর ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন । স্বামী বাড়িতে ছিলেন না । পাশের ঘরে তাঁর মামাতো দেওর রতন ঘোষ শুয়েছিলেন । অন্য একটি ঘরে ঘুমচ্ছিলেন বুল্টিদেবীর শ্বশুর-শাশুরি । সেই সময় বউদির ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে রতন । বুল্টিদেবী বাধা দিলে রতন খাটের নীচে থাকা বঁটি বের করে তা দিয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে । বঁটির আঘাতে বুল্টিদেবীর হাতের তিনটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । পাশাপাশি তাঁর মুখে কোপ মেরে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় রতন । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যু হয় বুল্টিদেবীর । তারপর রতন নিজের ঘরে চলে যায় ।
জানা গেছে,পরের দিন পরিবারের লোকজন বুল্টিদেবীর ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে অবাক হয়ে যান । এমন নৃশংসভাবে খুনের কারন ও আততায়ী কে, তানিয়ে ধন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায় পরিবারের লোকজন । পরেরদিন নিহতের জ্যাঠা কাটোয়ার আমডাঙা গ্রামের বাসিন্দা নিমাই ঘোষ থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ । পুলিশ পরিবারের লোকজনদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে । শেষে রতনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তার কথাবার্তায় একাধিক অসঙ্গতি দেখে পুলিশ বুঝতে সেইই ঘাতক । এরপর পুলিশ তাকে চেপে ধরতেই নিজের অপরাধের কথা কবুল করে গুনধর । বউদিকে খুনের অভিযোগে রতন ঘোষকে গ্রেফতার করা হয় । পরে ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বরে এই মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেয় কাটোয়া থানার পুলিশ । মোট ১৭ জন সাক্ষী ছিল এই মামলায় । তার মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ গ্রহণ করা হয় । বুধবার অভিযুক্ত রতন ঘোষকে দোষী সব্যস্ত করে আদালত । এদিন সাজা ঘোষণা হয় ।
জানা গেছে,কাটোয়ার আমডাঙা গ্রামে বাপের বাড়ি নিহত বধূর । খুনের ঘটনার বছর চারেক আগে পলসোনা গ্রামের বাসিন্দা উৎপল ঘোষের সঙ্গে তাঁর দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল । তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে । অন্যদিকে উৎপল ঘোষের সম্পর্কে মামাতো ভাই হয় রতন ঘোষ । ঘটনার দিন দাদার অনুপস্থিতির সূযোগ কাজে লাগিয়ে বউদিকে ধর্ষণ করতে গিয়েছিল সে । কিন্তু বাধা পেয়ে সে তার বউদিকে কুপিয়ে খুন করে । শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত দেওরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় খুশি নিহত বধূর পরিবার ।।

