প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ এপ্রিল : পয়লা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন। এই বিশেষ দিনে দেবী সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদ কামনায় মন্দিরে পুজোপাঠে অংশ নিলেন অগুনিত বর্ধমানবাসী।কারণ, তিনিই যে বর্ধমানবাসীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী । সারাটা বছর যাতে ভালোভাবে কাটে সেই প্রার্থনাও তাই বর্ধমানবাসী রাখলেন দেবী সর্বমঙ্গলার কাছেই । বর্ধমানবাসী বিশ্বাস করেন দেবী সর্বমঙ্গলার কৃপায় সারাটা বছর তাদের ভালোভাবেই কাটবে । সকল বিপদ আপদ থেকেও দেবী তাদের রক্ষা করবেন।
রাজার শহর হিসেবে পরিচিত বর্ধমান । দেবী সর্বমঙ্গলার আবির্ভাবের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে বর্ধমানের রাজ পরিবার ইতিহাস। বর্ধমান রাজ পরিবারের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির হল রাঢ়বঙ্গের ঐতিহাসিক মন্দির গুলির অন্যতম । বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলা অঞ্চলে বাস করা চুনুরীদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ঠি পাথরের অষ্টাদশী ভূজা দেবী মূর্তি বর্ধমানবাসীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ১৭৪০ সালে রাজা কীর্তি চাঁদ এই অষ্টাদশী দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে সর্বমঙ্গলা নামেই দেবী পূজিত হয়ে আসছেন । পরবর্তীকালে মহতাব চাঁদ দেবীর মন্দির তৈরী করেন। রাজা নেই, রাজ আমলও আর নেই ।তা বলে দেবীর বন্দনায় কোন খামতি পড়েনি । রাজ আমলের রীতি মেনে এখনও সারাটা বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজো হয়ে আসছে ।
রাজ আমলের অবসান হবার পর তৎকালীন মহারাজা উদয় চাঁদ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডের হাতেই তিনি প্রাচীন মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত সেই ট্রাস্টি বোর্ডই এই মন্দিরের পুজো অর্চনার যাবতীয় দায়দায়িত্ব সামলে আসছে । জেলার বাইরে ভিন জেলার বহু ভক্ত দেবী সর্বমঙ্গলার কৃপা লাভ কামনায় মন্দিরে পুজো দিতে আসেন ।
ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ জানালেন,
প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের দিনে ভোর থেকে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে সর্বমঙ্গলার মন্দিরে। বছরের প্রথম দিন দেবীর আশীর্বাদ লাভ কামনায় অনেকেই যেমন পুজোর ডালি নিয়ে পুজো দিতে আসেন,তেমনি হালখাতার পুজো সারতেও বর্ধমানের বহু ব্যবসায়ী এদিন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। যেমন হালখাতার পুজোর পাশাপাশি লক্ষ্মী আসেন। গণেশেরও পুজো দিতে এদিন মন্দিরে বহু ব্যবসায়ী আসেন। আগের বছরের চেয় এবছর মন্দিরে মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশী ছিল ।।