প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ এপ্রিল : কয়লা কারবারী রাজু ঝাকে খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১০ দিন। সিবিআইয়ের ডাক পাওয়া রাজু ঝাকে খুন কাণ্ডের কোন কিনারই পুলিশ এখনও করতে পারেনি । এই অবস্থার মধ্যেই ফের খুনের ঘটনা ঘটলো পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে। এবার খুন হল আইটিআই পাশ করা এক যুবক । নিহতের নাম তন্ময় মালিক(১৯)। তার বাড়ি শক্তিগড়ের হীরাগাছির ঘোষপাড়ায়।যুবক খুন হওয়ার খবর পেয়ে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহ রায় সহ অন্য পুলিশ কর্তারা। তদন্তে নেমে পুলিশ নিহতের নিকট বন্ধু পিন্টু মুর্মুকে গ্রেপ্তার করেছে । তন্ময়কে যে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে সেই ব্যাপারের পুলিশ এক প্রকার নিশ্চিৎ হয়েছে । জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছেন,ব্যক্তিগত শত্রুতার জরেই বন্ধু পিন্টুর হাতে খুন হয়েছেন তন্ময় । এদিকে একের পর এক খুনের ঘটনায় শক্তিগড়ের বাসিন্দা মহলে যথেষ্টই আতঙ্ক ছড়িয়েছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,রাজু ঝা যেখানে খুন হয় তার থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে হীরাগাছি এলাকা । সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ সেখানকার মাঠে তন্ময় মালিকের রক্তাত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা । মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকে দুটি ব্যাগ । তার মধ্যে একটি ব্যাগ তন্ময়ের বন্ধু পিন্টু মুর্মুর । ব্যাগ পড়ে থাকলেও পিন্টুর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। পিন্টু কোথায় গেল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য । নিহত যুবকের পরিবার দাবি করে চলেন বন্ধু পিন্টুই খুন করেছে তন্নয় কে। তাই খুনের পর ধরা পড়ার ভয়ে পিন্টু গা ঢাকা দিয়েছে । তবে কি কারণে পিন্টু তাঁর নিকট বন্ধুকে খুন করবে তার কিছুই কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা । রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। পিন্টুকে জেরা করে পুলিশ খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের সন্ধান চালাচ্ছে। মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে নিহত তন্ময়ের দেহের ময়নাতদন্ত হয় ।
তন্ময়ের বাবা তাপস মালিক বলেন,আমার ছেলে
আইটিআই পাশ করেছে। সোমবার ছেলে চন্দননগর থেকে বাড়ি আসে। বাইরে যাবে বলে ছেলের একটা ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার ছিল । তাই আমরা দুজনে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম ভ্যাকসিনের জন্য । ছেলে ওই দিনই চন্দননগর ফিরে যাবে বলে তাকে বিকালে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে হীরাগাছি রেলগেট পর্যন্ত পৌছে দিই । ওই সময় তন্ময় আমাকে বলে পিন্টু আসছে,ও আমায় স্টেশনে নিয়ে যাবে। তাপস বাবু আরও জানান,ছেলেকে রেলগেটে কাছে নামিয়ে দিয়ে তিনি নিজের কাজের জায়গায় চলে যান। তারপর সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা রেলগেটের অদূর মাঠের মধ্যে তন্ময়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । তারাই এমন ঘটনার কথা তাঁকে জানায় ।সেই খবর পেয়ে দ্রুত তিনি মাঠে পৌছে যান । মাঠে গিয়ে দেখেন সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর ছেলে পড়ে আছে । খবর পেয়ে পুলিশও মাঠে পৌছে যায় ।
এদিকে তন্ময়ের মৃতদেহের পাশে পিন্টু মুর্মুর ব্যাগ পড়ে আছে জেনে যথেষ্টই বিচলিত হয়ে পড়েছে পিন্টুর বাড়ির লোকজন । পিন্টুর মা পুতুল মুর্মু বলেন,আমার ছেলে পিন্টু বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে । এখনো তার কোন খোঁজ তাঁরা পাচ্ছেন না । জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । এটা খুনের ঘটনা বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে । নিহত যুবকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ।।