এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৪ এপ্রিল : ঈদের মুখে বাংলাদেশের ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে । বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে চারটি মার্কেট-বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। এসব মার্কেট মিলে প্রায় তিন হাজার দোকান ছিল । মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ কোনো একটি মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় । নিমেষের মধ্যে গোটা মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে । সমস্ত দোকান কার্যত ভস্মীভূত হয়ে যায় । বঙ্গবাজারের পাশে অ্যানেক্স টাওয়ার মার্কেটটি সাততলা বিশিষ্ট। এই ভবনেরও একাধিক তলায় আগুন লেগেছে বলে খবর । দুপুরের পরও সেখানে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছিল। এর ঠিক দক্ষিণ পাশে রয়েছে মহানগর কমপ্লেক্স। দোতলা এই মার্কেট টিনের চাল বিশিষ্ট । সেখানেও আগুন লাগে । তার পাশে পুলিশ সদর দপ্তর। পাঁচতলা বিশিষ্ট ওই ভবনে দুপুর ১২টার দিকে আগুন লাগে । পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু একের পর এক ভবনে আগুন লাগায় দমকলকর্মীর কার্যত হতভম্ব হয়ে যায় । আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করছে । আগুন লাগার পর আশপাশের দোকানপাটের মালাপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে ।
এদিকে বিপুল সংখ্যক দোকানে অগ্নিকাণ্ডের মাঝেই চলে দেদার লুটপাট । ফলে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বেঁচে যাওয়া সামগ্রী উদ্ধারের কোনো সূযোগই পায়নি ব্যবসায়ীরা । পাশাপাশি পুরনায় দোকান ফিরে পাবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ।
ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা সঞ্চয় ও সাধনের বঙ্গবাজারে কাপড়ের দোকান ছিল । ‘অনন্যা শাড়িঘর’ নামে ওই দোকানটিতে মালপত্র আর কিছুই অবশিষ্ট নেই । মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দোকান জ্বলতে দেখে অঝোরে কেঁদে গেছেন দুই ভাই । অনান্য ব্যবসায়ীরা তাদের সান্ত্বনা দেন । সঞ্চয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন,’আমাদের দুই দোকানে এক কোটি টাকার ওপরে মালপত্র ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মালপত্র ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে আমদানি করা। কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই ছাই হয়ে গেল । গতকাল বেচাকেনার পর লাখ দশেকের মতো টাকা দোকানে রেখে গিয়েছিলাম । সেই টাকা সঙ্গে নিয়ে গেলেও কিছুটা বেঁচে যেত ।’
তাঁরা আরও বলেন,’এখন আমাদের একটাই ভয়, দোকান ফের ফিরে পাব কি না,নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারব কি না । কারণ এর আগে যেখানে এমন অগ্নিকাণ্ড হয়েছে, তখনকার অভিজ্ঞতা ভালো নয় । সমস্ত দোকান বেদখল হয়ে গেছে । আগের ব্যবসায়ীরা আর ফিরে পাননি সেই সমস্ত দোকান । বঙ্গবাজারের ক্ষেত্রে যেন একই অবস্থা না হয়,তার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমরা ।’
একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন । তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন,ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন । তাঁদের সম্পদ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের দ্রুত পুনর্বাসন করা হোক । ব্যবসায়ীদের মনে সবচেয়ে বড় ভয় ঢুকেছে যে তারা তাদের দোকান আদপেই আর ফেরত পাবেন কিনা । এখন নিজের নিজের দোকান ফিরে না পেলে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে ।’।