প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ মার্চ : ‘ভূমিপুত্র’-কে প্রার্থী করার দাবি পুরণ হয়নি । তৃণমূল নেতৃত্ব পুর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভায় প্রার্থী করেছে ‘বগিরাগত’ অলোক মাঝিকে। তা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁষছিলেন জামালপুর বিধানসভার তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা।সেই ক্ষোভেরই বহিপ্রকাশ মঙ্গলবার সকাল থেকে দেখা গেল জামালপুর এলাকা জুড়ে ।“ ’বহিরাগত’ প্রার্থী অলোক মাঝিকে মানছি না মানবো না । জামালপুর বিধানসভায় ’ভূমিপুত্র’ প্রার্থী চাই “। এমন ব্যানারে এখন ছয়লাপ জামালপুর। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে । এমন ঘটনায় অবশ্য বেজায় উৎফুল্ল বিজেপি শিবির ।তাঁদের বক্তব্য যারা ‘খেলা হবে’ শ্লোগানের জনক তাঁরাই খেলা শুরু করে দিয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁদের প্রার্থীদের নাম ঘোষনার অনেক আগে থেকেই জামালপুরের তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা ‘ভূমিপুত্র ’প্রার্থীর দাবি করে চলেন। সেই সময়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন শ্রীমন্ত রায়।তাঁর অনুগতরা স্থানীয় ক্ষেত্রমোহন মাঝি অথবা অমল দলুই কে প্রার্থী করার দাবি তোলে । অপর পক্ষের নেতা তথা জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানের
অনুগামীরা এলাকার উচ্চ শিক্ষিত ভূতনাথ মালিককে প্রার্থী করার দাবি দলের কাছে জানান । কিন্ত দলের নেতৃত্ব দুই পক্ষের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে গলসি বিধানসভা থেকে
অলোক মাঝিকে তুলে এনে জামালপুর বিধানসভার প্রার্থী করেছেন ।
অলেক মাঝির নাম ঘোষনা হতেই মুষড়ে পড়েন মেহেমুদ খান ও তাঁর অনুগামীরা । তারা সদলবলে অলোক মাঝির উপরে গোসা করে বসে থাকেন । তবে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্রীমন্ত রায় দলীয় বাধ্যবাধকতা মেনে তাঁর অনুগতদের নিয়ে অলোক মাঝির হয়ে ভোট প্রচারে নেমে পড়েন । কিন্তু পরিস্থিতির বদল ঘটে যায় এর কিছুদিন পরেই । মেহেমুদ খানের মানভঞ্জন ঘটাতে ভোটের মুখেই গত ১৫ মার্চ দল শ্রীমন্ত রায় কে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে মেহেমুদ খান কে সভাপতি করে দেয় । এরপর সব অভিমান দূরে সরিয়ে মেহেমুদ খান তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে অলোক মাঝির হয়ে ভোটের প্রচারে নেমে পড়লেও রাজনীতির ময়দান থেকে একেবারে ‘ভ্যানিস’ হয়ে যান শ্রীমন্ত রায় ও তাঁর অনুগামীরা । গত ৪ মার্চ সকাল থেকে জামালপুর যে ব্যানারে ছয়লাপ হয় তাতে লেখা ছিল,“ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করা না হলে ভোটের দিন সাপ লুডে খেলে দেবে জামালপুরের তৃণমূল কর্মীরা“ । আর এদিন যে ব্যানারে ফের ছয়লাপ জামালপুর তাতে লেখা রয়েছে ,“ ভূমিপুত্র প্রার্থী চাই । ‘বহিরাগত’ প্রার্থী
অলোক মাঝিকে মানছি না ,মানব না”।
এদিনের ব্যানার প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাঝি বলেন ,“কারা কোথায় কি ব্যানার লাগাচ্ছে সেই বিষয়েটিতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু দেখছি নি। এইসব বিরোধীদেরও কাজ হতে পারে ।দল আমায় জামালপুর বিধানসভায় প্রার্থী করেছে।জামালপুরের নেতা ও কর্মীরা আমায় জেতানোর জন্য জোরদার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে“ । সদ্য জামালপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া মেহেমুদ খান এদিন বলেন ,“অলোক মাঝি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি মাত্র। রাজ্যের ২৯৪ টি আশনে আশলে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী করর জন্য জামালপুরের তৃণমূল কর্মীরা লড়ছে । ব্যানার যারাই ঝোলাক কিছু লাভ হবে না । অলোক মাঝি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন“ । অপর দিকে শ্রীমন্ত রায় বলেন ,“দলে আমাকে যোগ্য মানতে না পরে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাই এখন আমার কোন দায় নেই , দায়িত্বও নেই ।কোথায় কে কি ব্যানার- ফেস্টুন
ঝোলাচ্ছে সেই বিষয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দেখবে । আমার এখন ওইসব দেখার এক্তিয়ারও নেই“ ।
ভোটের মুখে জামালপুরে তৃণমূলের আভ্যন্তরিন লড়াই চরমে ওঠায় বেজায় উৎফুল্ল বিজেপি শিবির । জামালপুর বিধানসভার বিজেপি আহ্বায়ক জীতেন ডকাল বলেন ,তৃণমূলই ‘খেলা হবে ’শ্লোগানের জনক ।জামালপুরে সেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর খেলা এখন জমে উঠেছে । এখন মনে হচ্ছে ভোটের দিন সত্যি সত্যি ওরা ‘সাপ লুডো’ খেলবে । জামালপুর বিধানসভার এবার পদ্ম ফুটছেই বলে জীতেন ডকাল এদিন দাবি করেছেন ।।