এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৮ মার্চ : বোরখা বা হিজাবকে মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় পোশাক বলে মনে করা হয় । কিন্তু ওই পোশাককে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাও ঘটেছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় । যে কারনে বিশেষ ওই পোশাক নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায় । কেউ কেউ বিশেষ ওই পোশাকটিকে মুসলিম মহিলাদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় বলেও মনে করেন । যাই হোক, বিশ্বের এমন ১১ টি দেশ আছে সেখানে বোরখা,হিজাব বা সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা নিকাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । এই তালিকায় তাজাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার মত দুটি মুসলিম রাষ্ট্রও রয়েছে ।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে ফ্রান্স । ইউরোপের দেশগুলের মধ্যে সর্ব প্রথম ফ্রান্সেই আইন করে বোরখা বা নিকাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে । এমনকি কেউ বোরখা পরে রাস্তা দিয়ে গেলে জরিমানা পর্যন্ত করা হয় । ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে এই আইন চালু করেছে ফ্রান্স সরকার । ফ্রান্সে প্রায় ৫০ লাখ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের আর একটি দেশ জার্মানি । জার্মানির রক্ষণশীল দলগুলোই মূলত বোরখা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়ে উদ্যোগী হয় । সরকারি অফিস, আদালত,স্কুল কলেজ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরখা বা সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা নিকাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এই দেশটিতে । জার্মানির তিন চতুর্থাংশ মানুষই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ।
তালিকার তিন নম্বরে রয়েছে সুইজারল্যান্ড । সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারি ভাষার একটি হল ইতালীয় ভাষা । আর ইতালীয় ভাষাভাষীদের এলাকায় বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । এনিয়ে রীতিমতো ভোটও হয় সেখানে । হিজাবের বিরুদ্ধে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন । এরপর সুইজারল্যান্ডের ২৬ টি শহরে বোরখা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় । বোরখা পরে রাস্তায় বের হলে ৯,২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হয় ওই শহরগুলিতে ।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডস । ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসে আইন করে বোরখা নিষিদ্ধ করা হয় । তবে আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে । প্রকাশ্যে কোনো মহিলা বোরখা পরে ঘুরলে জরিমানা করা হয় । অফিস কাছারি,স্কুল কলেজ সর্বত্র বোরখা নিষিদ্ধ সুইজারল্যান্ডে ।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া । অস্ট্রিয়ার ক্ষমতাসীন জোট সরকার ও সরকার বিরোধী দলগুলি প্রকাশ্যে বোরখা বা মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে । সরকারি চাকুরী জীবি মহিলাদের স্কার্ফ, হিজাব বা অনান্য ধর্মীয় ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রিয়া ।
ষষ্ঠস্থানে রয়েছে ইউরোপের আর একটি দেশ বেলজিয়াম । ২০১১ সালের জুলাই মাসে বেলজিয়ামে বোরখা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে । আইন অনুযায়ী সেদেশে প্রকাশ্যে কোনো মহিলা তার মুখ ঢাকতে পারবে না । এমনকি আইন অমান্যকারীকে মোটা অঙ্কের জরিমানা পর্যন্ত গুনতে হতে পারে ।
সপ্তম স্থানে রয়েছে স্পেন । স্পেনের বার্সেলোনা শহরে বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । তবে গোটা দেশে এই নিয়ম চালু নেই । অষ্টম স্থানে রয়েছে ইউরোপের আরও একটি দেশ ইতালী । এই দেশের বেশ কয়েকটি শহরে হিজাব বা বোরখা নিষিদ্ধ । সত্তরের দশকে মুখ ঢাকা সমস্ত পোশাকের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইতালি । নবম স্থানে রয়েছে উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ(Chad)। ২০১৫ সালের জুনে পরপর দুই সন্ত্রাসবাদী হামলার পর মহিলাদের মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে এই দেশট । এমনকি কোথাও বোরখা বিক্রি করা হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে তা পুড়িয়ে দেয় । এমই আইন আছে এই দেশটিতে ।
তালিকার দশম স্থানে রয়েছে এশিয়ার মুসলিম বহুল দেশ তাজাকিস্তান । ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বোরখা ও হিজাব নিষিদ্ধ করে এই দেশটি । তবে কোনো সাজার ব্যবস্থা নেই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে । কারাদণ্ড বা জরিমানা করার বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে দেশটিতে ।
তালিকায় একাদশ তম স্থানে রয়েছে এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা । ২০১৯ সালের ২১ শে এপ্রিল শ্রীলঙ্কার একটি গির্জায় রবিবারের প্রার্থনা চলাকালীন আত্মঘাতী হামলায় ২৫৩ জনের মৃত্যুর পর দেশটিতে বোরখা বা হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ৷ ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে শ্রীলঙ্কা সরকার ।
তালিকার দ্বাদশ স্থানে নাম রয়েছে আরও একটি মুসলিম রাষ্ট্র তিউনিসিয়ার । ২০১৯ সালের ৫ জুন আইন করে বোরখা বা হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এই দেশটি । আইন অনুযায়ী সরকারী দপ্তর, আদালত,স্কুল কলেজ বা কোনো জনবহুল এলাকায় কোনো হিজাব বা বোরখা পরে যেতে পারবে না । সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় মুসলিম বহুল এই দেশ । তবে শুধু তিউনিসিয়াই নয়,বোরখা বা হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য মূলত সন্ত্রাসবাদকেই দায়ি করেছে বাকি দেশগুলি ।।