এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৭ মার্চ : পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার শ্রীপুর গ্রামের খুন হওয়া বিজেপি কর্মী বলরাম মাজির (২২) মা টুম্পা মাজিকে খুন ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাহিদুল আলম মোল্লা ও তার দলবলের বিরুদ্ধে । এদিকে শাসকদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাগাতার ওই ধরনের হুমকি পেয়ে প্রথমে কেতুগ্রাম থানায় এনিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে যান টুম্পাদেবী । কিন্তু কেতুগ্রাম থানার পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ । বাধ্য হয়ে তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন । শেষে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ।
যদিও বলরাম মাজির খুনের মামলার অন্যতম আসামি কেতুগ্ৰাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সাহিদুল আলম মোল্লা এই অভিযোগ ‘বিজেপির চক্রান্ত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন । এদিকে নিহত দলীয় কর্মীর পরিবারের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় । তিনি আরও জানান বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নজরে আনবেন । যদিও অভিযুক্ত দলীয় নেতা সাহিদুল আলম মোল্লার সুরেই সুর মিলিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় । তিনি বিষয়টি ‘বিজেপিরই চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন ।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষনার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছিলেন একাধিক বিজেপি কর্মী । বাদ ছিল না পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামও । ওই বছর ৪ মে রাতে শ্রীপুর গ্রামের বিজেপি কর্মী বলরাম মাজির বাড়িতে রড, লাঠি, ধারালো অস্ত্র ও বোমা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন চড়াও হয় । তারপর তারা বলরামকে বাড়ি থেকে তুলে শ্রীপুর দিঘির পাড়ে নিয়ে গিয়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ । টুম্পাদেবীর অভিযোগ, ঘটনার পর তার ছেলেকে যখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তৃণমূল আশ্রিত দুস্কৃতীরা পথে বাধা দেয় । অনেক পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে বলরামকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরের দিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় বলরামের ।
এদিকে ছেলের মৃত্যুর পর টুম্পা মাজি এনিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাহিদুল আলম মোল্লা ও তৃণমূলের কর্মী সাহানুর আলম মোল্লা, মেহেরজান শেখ, সাজাহান শেখ এবং কামালুদ্দিন শেখ এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে কেতুগ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশ সাহিদুল আলম মোল্লা সহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করে । ধৃতদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয় । যদিও পরে তারা জামিনে মুক্তি পায় । এদিকে তার আগে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে । রাজ্যের অনান্য জায়গায় বিজেপি কর্মীদের খুনের মামলার পাশাপাশি শ্রীপুরের খুনের ঘটনারও তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই ।
নিহত বিজেপি কর্মী বলরাম মাজির বাবা মিতোন মাজি ও মা টুম্পাদেবীর অভিযোগ,তাদের ছেলের খুনিরা জামিন পাওয়ার পর থেকেই আদালতে সাক্ষী দিতে গেলে খুনের পাশাপাশি পরিবারের মহিলাদের প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে অভিযুক্তরা । তারা কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ জানাতেও গিয়েছিলেন । কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে । শেষে বাধ্য হয়ে তারা গত শুক্রবার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান ।।