প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ মার্চ : ভোটের দামামা বেজে যাওয়ার পরেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় হাজির হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শহর বর্ধমান সহ জেলার সর্বত্র জারি রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ। তবুও সোমবার রোখা গেল না বোমা বিস্ফোরণে শহর বর্ধমানে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা । তা নিয়ে রাজনীতিকরা একে অপর কে দায়ী করে দায় সারলেও বর্ধমানের বাসিন্দা মহলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে । ভোটের মুখে বোমা বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু ও এক শিশুর জখম হওয়ার ঘটনা রানৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে । ঘটনা কথা জানার পর নির্বাচন কমিশনও নড়ে চড়ে বসেছে।
এদিন বেলা ১১ টা নাগাদ পর পর দুটি বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে বর্ধমান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসিকপুর এলাকা।বর্ধমান থানা থেকে ১ কিলোমিটারের কম দূরত্বে রসিকপুরের একটি ক্লাবের কাছে ফাঁকা জায়গায় ওই বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের আকশ্মিকতা কাটিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়েই এলাকার বাসিন্দারা দেখেন ক্লাবের কাছে রক্তাত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেখ আফরোজ (৭) ও সেখ ইব্রাহিম (৮)।ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকার বাসিন্দা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । খবর পেয়ে বর্ধমান থানার পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌছায় । দুই শিশুকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখ আফরোজ কে মৃত ঘোষনা করেন । আশঙ্কাজনক অবস্থায় অপর জখম শিশু সেখ ইব্রাহিম বর্ধমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন ,সেখ আফরোজ রসিকপুরের সুভাষপল্লী এলাকার বাসিন্দা। আর ইব্রাহিমের বাড়ি মেমারি থানার বিজরে এলাকায়।সে সুভাষপল্লী এলাকায় মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে ছিল ।দুই শিশুর এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকাতুর হয়ে পড়েছেন তাঁদের পরিজন ও এলাকাবাসী । এলাকার বধূ কৃষ্ণা ঘোষ বলেন ,বিকট শব্দে দুটি বোমা পরপর ফাটে। তাতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ,আর একজন শিশু গুরুতর জখম হয়েছে । কি ভাবে এই ঘটনা ঘটলো তা তাঁরা কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না । ঘটনা ঘটার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন বলে কৃষ্ণাদেবী সহ এলাকার উপর মহিলারা জানিয়েছেন।
ভোটের মুখে বোমা বিস্ফোরণে এক শিশু মারা যাওয়া ও এক শিশুর জখম হওয়ার ঘটনা পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে । রসিকপুরে ক্লাবের কাছে ফাঁকা জায়গায় বোমা কি ভাবে এল , কারা ওই বোমা রাখতে পারে তার জোরদার তদন্ত পুলিশ শুরু করেছে ।এলাকায় আরা বোমা লুকিয়ে রাখা আছে কিনা তাও পুলিশ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এনে এদিন খতিয়ে দেখে । যদিও এদিন আর কোনোও বোমার হদিশ এলাকায় পাওয়া যায়নি। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ এলাকাটি ঘিরে রেখে দিয়েছে ।
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “কেস রুজু করে আমরা তদন্ত শুরু করেছি । প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে হাড়ি বা ছোট কলসীর মত কোনো বস্তুতে একটা কোনো বোমা রাখা ছিল। সেটাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে একটি ছেলে মারা গেছে। অন্য একটি ছেলে আহত হয়েছে”। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ,রসিকপুরের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে পূর্ব বর্মানের জেলা শাসকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে ।
বর্ধমান শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড় নীলপুর
সুকান্তপল্লী এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার
উদ্ধার হয়েছিল পেটি ভর্তি বোমা।তার পর পাঁচ দিন কাটতে না কাটতে শহর বর্ধমানের রসিকপুরে বোমা বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু ঘটনা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে । শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক ও বিরোধীদের তর্জা । পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস এদিন বলেন, ‘আমরা চাই প্রশাসন রসিকপুরের ঘটনার পূর্ণঙ্গ তদন্ত করুক। যাতে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়।প্রসেনজিৎ বাবু আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রশাসনকে বদনাম করার জন্য কোনো অশুভ চক্র ভোটের সময়ে এই কাজ করে থাকতে পারে’।’তৃণমূলের মুখপাত্রের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন,’কারা অশুভ শক্তি তা গোটা রাজ্যের মানুষই জানেন। কয়েকদিন আগে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা থেকে পেটি ভর্তি বোম পাওয়া গিয়েছিল । আর এদিন বোমা বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু হল । শ্যামল বাবু দাবি করেন ,এইসব ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে তৃণমূল নেতারা যুক্ত আছে। ওদের উদ্দেশ্য ছিল বোম ফাটিয়ে বিজেপির নামে দোষ চাপানো’ ।।