প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ মার্চ : প্রশাসনিক তদন্তে নস্যাৎ হল বিডিও সহ তৃণমূলের নেতা ও জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মে মদত দেওয়ার অভিযোগ । পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ‘নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের’ এক পদাধিকারীর আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে রপোর্ট দিলেন তদন্তকারীরা । যদিও এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সন্তষ্ট নন অভিযোগকারী মীরাতাজ বেগম । তাঁর দাবি তদন্ত একপেশে হয়েছে ,রিপোর্টও পক্ষপাতদুষ্ট ।
জামালপুরের দোলোরডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মীরাতাজ শেখ (বেগম)।চলতি বছরের ২ মার্চ তারিখে তিনি জেলাশাসক,জেলা পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের নানা মহলে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পত্রে মীরতাজ নিজেকে ’নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের“ একজন পদাধিকারী বলে দাবি করেন।লিখিত অভিযোগে প্রশাসনকে তিনি জানান,,“নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের“ নামে বেআইনি নথীপত্র তৈরি করে এবং তাঁর সই নকল করে জামালপুরের দুটি পৃথক ব্যাঙ্ক শাখায় এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।যাঁরা মিলে পরিকল্পনা করে ওই ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট গুলি খুলেছেন তাঁদের মধ্যে ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার,পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন, এল-জি-এস চন্দনা ঘোষ,জামালপুর ১পঞ্চায়েতের প্রধান ডলি নন্দী,উপ-প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডলও রয়েছেন। মীরাতাজ তাঁর অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন,তাঁর সই নকল করে তৈরি করা দুটি ব্যাঙ্ক এ্যাকন্টে রেখা দাস নামে একজনকে নেত্রী সাজানো হয়েছে । আর ওই দুটি ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের মাধ্যমে কমবেশী ’আড়াই কোটি টাকা’ আত্মসাৎ করে নেওয়া হয়েছে।
মীরাতাজ বেগম তাঁর অভিযোগে প্রশাসনকে এও জানান,খুবই গোপনে নারীচেতনা কো-অপারেটিভ
সোসাইটি লিমিটেডের“ নামে দুটি ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তাই তিনি সহ তাঁদের গোষ্ঠীর অনেকেই সেটা জানতে পারেননি । পরে তা জানতে পাবার পর তিনি দুটি ব্যাঙ্কের অফিসে খোঁজ নিতে যান । তখন তাঁকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানায় ’ব্লকের বিডিও শভঙ্কর মজুমদার,পঞ্চায়েত সমিতির পূর্বতন সভাপতি মেহেমুদ খাঁন,এল জি এস চন্দনা ঘোষ এবং তাদের সঙ্গী সাথীদের কথায় ওই এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে’।এমনটা জানতে পারার পরেই তিনি জামালপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান।থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করায় অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার কো-অপারেটিভ সোসাইটির কাছে তিনি সবিস্তার জানান। এরপর সমস্ত নথিপত্র নিয়ে তিনি ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট খোলার কারণ জানতে বিডিওর কাছে পৌছান।বিডিও তাঁকে বলেন,তুমি মহিলা হয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করছো।তুমি যদি ভাল চাও,তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে যে যে জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছ,সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নাও । মীরাতাজের কথায়,বিডিও সাহেব এমন হুমকি দেবেন সেটা তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল ।তাই তিনি জেলা শাসক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর,এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ জানিয়ে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি করেন ।
গুরুতর এমন অভিযোগ পেয়েই নড়ে চড়ে বসে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা
অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন। জেলাশাসকের নির্দেশ পেয়েই ডিস্ট্রিক্ট মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট
এবং ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেল তদন্তে নামে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদন্তকারী অফিসাররা গত ১৪ মার্চ জামালপুরে এসে “নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের“ বর্তমান বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি পত্রও খতিয়ে দেখেন।পরে তন্দন্তকারী অফিসাররা ব্যাঙ্কে গিয়েও “নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের“ এ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করেন । তথ্য যাচাই শেষে প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডি আর ডি সি) অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসনের কছে রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে মীরাতাজ শেখ (বেগম) এর আনা যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন (unsubstantiated) । এই রিপোর্টের বিষয়ে প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডি আর ডি সি) অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বলতে চান নি। তবে জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে,অভিযোগ ’ফলস’ বলেই তদন্তে প্রমানিত হয়েছে।
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার এদিন বলেন,আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যে ভিত্তিহীন,সেই কথা আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি। তদন্তে সেটাই প্রমান হল। বিডিও দাবি করেন, যে ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটি খোলা হয়েছিল ২০১৮ সালে । তখন আমি জামালপুর ব্লকের বিডিও ছিলাম না । আমি ২০১৯ সালে জামালপুর ব্লকের বিডিও পদে যোগদান করেছি। সেটা জেনেও ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে অভিযোগকারী আমার নামে মিথ্য অভিযোগ করে বসলেন”। ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন,“প্রশাসনিক তদন্তে প্রমান হয়ে গিয়েছে আমার ও বিডিও সাহেবের বিরুদ্ধে আনা আভিযোগ ভিত্তিহীন।আমি চাই মিথ্য অভিযোগ করার জন্য প্রশাসন অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।
মীরাতাজ বেগম যদিও এই তদন্ত রিপোর্টে সন্তুষ্ট নন। তিনি এদিন বলেন,কবে তদন্ত হল ,কি তদন্ত হল তার কিছুই আমি জানি না। আমি যে অভিযোগ করেছি তার কোন সারবত্তা আছে কি নেই সেই বিষয়ে তদন্তকারী অফিসার আমার কাছে কিছুই জানতে চাইলেননা । কোন তদন্তকারী অফিসার আমার সঙ্গে কথাও বলেননি। কয়েকদিন আগে দুপুরবেলা ব্লকের যুগ্ম বিডিও আমায় ফোন করে বলেন,তদন্তকারী অফিসাররা এসেছেন। আমাকে বিডিও অফিসে হাজির হতে বলেন । আমি “নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের“ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তড়িঘড়ি বিডিও অফিসে পৌছাই । তখন যুগ্ম বিডিও বলেন,
তদন্তকারী অফিসাররা চলে গিয়েছেন। এর পর শুক্রবার একটা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাই ।তাতে উল্লেখ করা হয়েছে,আমার করা সব অভিযোগই নাকি ভিত্তিহীন। মীরাতাজ দাবি করেন,তদন্ত যাই হোক,সেটা একপেশে হয়েছে। আর তদন্ত রিপোর্টও পক্ষপাতদুষ্ট বলেই তিনি মনে করছেন ।।